২০ রমজানের মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধের আহ্বান শ্রমিক নেতাদের

সংবাদ সম্মেলন
শ্রমিক নেতারা দেশের সব অর্থনৈতিক অঞ্চল ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) শ্রমিকদের একই শ্রম আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘আইএলও রোডম্যাপ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি: ট্রেড ইউনিয়নের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি) বাংলাদেশ কাউন্সিল, ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল ও পিএসআই-এনসিসি ফর বাংলাদেশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইটিইউসি বাংলাদেশ কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল সাকিল আখতার চৌধুরী। এ সময় আরও বক্তব্য দেন ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের জেনারেল সেক্রেটারি শহিদুল্লাহ বাদল। সাংবাদিকরা জানতে চান, ঈদের সময় শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে কি না। জবাবে শহিদুল্লাহ বাদল জানান, গত সপ্তাহে শ্রম মন্ত্রণালয়ে মালিক, শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মালিকপক্ষ আগামী ২০ রোজার মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস পরিশোধের বিষয়ে রাজি হয়েছে।
তিনি বলেন, সঠিক সময়ে বেতন-বোনাস প্রদান করা হলে শ্রম অসন্তোষ হবে না, তবে তা না হলে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হতে পারেন, যার দায় সরকার ও মালিকপক্ষকে নিতে হবে।
সাকিল আখতার চৌধুরী উল্লেখ করেন, গত ছয় মাসে বেশ কিছু জায়গায় শ্রম অসন্তোষ দেখা গেছে এবং প্রায় সব ক্ষেত্রেই এর মূল কারণ শ্রমিকদের সময়মতো মজুরি না পাওয়া। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধ করা না হলে একই পরিস্থিতি পুনরায় সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যেসব কারখানা আর্থিকভাবে দুর্বল রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বেতন–বোনাস কীভাবে দেওয়া হবে সেই দায়দায়িত্ব বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর মতো সংগঠন তথা মালিকপক্ষকে নিতে হবে। আর ঈদের আগে হঠাৎ কোনো কারখানা বন্ধ করা যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রম আইন সংস্কারের দাবিও তুলে ধরা হয়। শ্রমিক নেতারা বলেন, বর্তমানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে আলাদা শ্রম আইন চালু রয়েছে, যা শ্রমিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। এ কারণে তারা সব শ্রমিককে একই শ্রম আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে শ্রমিক সংগঠনগুলো সরকারের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রমিক সংজ্ঞা বিস্তৃত করা, যাতে শ্রম আইন সব শ্রমিকের জন্য প্রযোজ্য হয়; সব শ্রমিকের জন্য পরিচয়পত্র ও নিয়োগপত্র বাধ্যতামূলক করা; সরকারি-বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানে ২৪ সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা; ট্রেড ইউনিয়নের স্বায়ত্তশাসন রক্ষা করা; শ্রমিকনেতাদের অন্যায্যভাবে বরখাস্ত করার জন্য ব্যবহৃত ধারা ২৬ ও ২৭(৩)(এ) বাতিল করা; জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা ও মজুরি কমিশন গঠন করা; শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তাদের আইনগত পরামর্শদাতা নিয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা এবং শ্রমিকনেতাদের নামে করা হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহার করা।
শ্রমিক সংগঠনগুলো সরকারের কাছে দাবি জানায়, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বেতন-বোনাস সময়মতো পরিশোধ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোনো ধরনের শ্রম অসন্তোষ সৃষ্টি না হয়।