রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, চৈত্র ২ ১৪৩১, ১৬ রমজান ১৪৪৬

ব্রেকিং

ভবিষ্যতে কোনো বাবা-মায়ের বুক যেন এভাবে আর খালি না হয়: আবরার ফাহাদের বাবা আবরার হত্যা: ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন হাই কোর্টে বহাল মাগুরায় শিশু হত্যার প্রধান আসামির ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন চট্টগ্রামে ভিক্ষুককে ‘ধর্ষণের’ অভিযোগে অটোরিকশা চালক গ্রেপ্তার রাঙামাটিতে ইউপিডিএফের কালেক্টরকে গুলি করে হত্যা জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকা ত্যাগ ফরিদপুরে তিন বাহনের সংঘর্ষে নিহত ২ খুলনায় একাধিক হত্যা মামলার আসামি গুলিতে নিহত জামালপুরে মাদ্রাসার ২ ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগ, আটক শিক্ষক নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চার শিক্ষার্থীর ‘গ্যাংআপ’ চট্টগ্রামে পুলিশকে গুলি করে পালানো ‘ছোট সাজ্জাদ’ ঢাকায় গ্রেপ্তার দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপির কর্মী নিহত গণমাধ্যমকর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ ট্রাম্পের ইয়েমেনে হুতিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা মাকে নিয়ে আর গ্রামে ফেরা হলো না শহীদ জামাল উদ্দিনের

অর্থনীতি

নওগাঁয় আমে ৩৫০০ কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভাবনা

 প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৬ মার্চ ২০২৫

নওগাঁয় আমে ৩৫০০ কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভাবনা

দেশের অন্যতম আম উৎপাদকারী জেলা নওগাঁ। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার আমের মুকুল সবচেয়ে বেশি এসেছে জেলার আমের বাগানগুলোতে। নওগাঁর বাতাসে এখন মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে। কয়েক দিনের বেশিরভাগ সময় আবহাওয়া আম উৎপাদনের জন্য অনুকূল রয়েছে। এবার গাছে গাছে মুকুলের আধিক্য দেখে ব্যাপক ফলনের আশা করছেন আমাচাষিরা।

কৃষিবিদরা বলছেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া আম চাষের অনুকূলে রয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে। এবার গত বছরের চেয়ে ২০০ হেক্টর জমিতে বেড়েছে আমের বাগান। আশা করা হচ্ছে, গত বছরের চেয়ে এবার ২৫ হাজার টন ফলন বাড়তে পারে।

আমচাষিরা বলছেন, প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী এক মৌসুমে ভালো ফলন হলে পরেরবার আমের ফলন কম হয়। সে হিসেবে গত বছর নওগাঁয় আমের ফলন কম হওয়ায় এবার তারা আমের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধেছেন। বাগানে প্রায় সব গাছেই মুকুল এসেছে। মুকুলকে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে ছত্রাকনাশক কীটনাশক স্প্রে করছেন তারা। ক্ষেত্র বিশেষে ছিটানো হচ্ছে পানি। আমগাছের গোড়াতেও পানি দিচ্ছেন চাষিরা।

এদিকে বাগানে মুকুল আসা শুরু করতেই মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা মাঠে নেমে পড়েছে। তারা মুকুল দেখে বাগান কেনার জন্য মালিকদের কাছে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরে মুকুলে গুটি হওয়ার পর বাগান কেনাবেচার জন্য আমবাগানীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা বাগান কেনাবেচা নিয়ে কথা শুরু করেছেন।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার নওগাঁ জেলায় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ করা হয়েছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর। গত বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩১ হাজার টন। উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। এবার ৪ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।

নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়। এ ছাড়াও  নিয়ামতপুর পত্নীতলা, ধামইরহাট, বদলগাছি উপজেলা আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নওগাঁ জেলায় নাগ ফজলি, ল্যাংড়া, আম রুপালি, গোপালভোগ, আশ্বিনা, কাটিমন, বারি আম-৪, বারি আম-১১, গুটি আম ও ফজলি জাতের সুস্বাদু আমের উৎপাদন বেশি।

সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া এলাকাসহ ২০০ বিঘা জমির ওপর তিনটি আমবাগান রয়েছে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার। তিনি স্থানীয় বাজারে আম বিক্রি ছাড়াও বিদেশেও আম রপ্তানি করে থাকেন।

সোহেল রানা বলেন, গত বছর তার বাগানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। এবার এখন পর্যন্ত তার বাগানে ৮০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। ফাল্গুন মাস আমের মুকুল আসার উপযুক্ত সময়। আশা করছেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে বাকি গাছগুলোতেও মুকুল আসবে। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত আমের জন্য অনুকূলে আছে। রোদের তাপ কম পেলে ও প্রকৃতি কুয়াশায় ঢেকে থাকলে মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য গাছে ছত্রাকনাশক কীটনাশক স্প্রে করছেন তিনি।

পোরশা উপজেলার বড়গ্রাম এলাকার আমাচাষি রায়হান আলম বলেন, গত বছর শীতের কারণে অনেক দেরিতে মুকুল এসেছিল। গাছে মুকুল আসতে প্রায় ১৫-২০ দিন দেরি হয়েছিল। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়েও অনেক গাছে মুকুল ধরেছিল। তবে সে তুলনায় এবার অনেক আগেই মুকুল এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সাধারণত ধরা হয় দীর্ঘস্থায়ীভাবে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে আমের মুকুল ধরতে চায় না। তবে এবার জানুয়ারি মাসে দুই-এক দিন করে শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দীর্ঘস্থায়ী শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। গড় তাপমাত্রা প্রায় ২০ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিল। এই তাপমাত্রা আমের জন্য অনুকূল। তবে কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে কুয়াশা থাকছে। তবে তাপমাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। কুয়াশার কারণে মুকুলে ছত্রাকের আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য আমরা আমচাষিদের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি।’ 

তিনি বলেন, চলতি বছরে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে নওগাঁর আমের বাগান থেকে সাড়ে চার লাখ টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। আমের বাজার ভালো থাকলে এবছর নওগাঁ জেলায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।