দেশের ব্যাংক খাতে কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে, পাশাপাশি কোটিপতি হিসাবের সংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি, যা মাত্র তিন মাসে ৪ হাজার ৯৫৪টি বেড়েছে। একই সময়ে ব্যাংকে নতুন হিসাব খোলা হয়েছে ১২ লাখ ১৯ হাজার ২৭৭টি এবং মোট আমানত বেড়েছে ৪৫ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা।
দেশে মোট ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২টি, যা সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা মানেই যে সেটিই প্রকৃত কোটিপতির সংখ্যা, তা নয়। বিশ্লেষকদের মতে, অনেক বিত্তশালী ব্যক্তি নগদ টাকা, স্বর্ণ, জমি ও অন্যান্য সম্পদ হিসেবে অর্থ সংরক্ষণ করেন, যা ব্যাংকের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো সরকারি সংস্থা কোটিপতিদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি।
অর্থনীতিবিদদের মতে, কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। সরকারের কঠোর অবস্থানের ফলে অনেক দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারী অর্থ পাচার করতে পারছে না, ফলে তারা ব্যাংকে টাকা জমা করছে। একই সঙ্গে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করছে, যার ফলে তাদের ব্যাংক হিসাবে টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংকের উচ্চ সুদের হারও অনেক বিত্তশালীকে ব্যাংকে অর্থ জমা রাখতে উৎসাহিত করছে। পাশাপাশি, রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে যাওয়ার পর অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আবার ব্যাংকে অর্থ জমা করতে শুরু করেছে, যার ফলে হিসাবের সংখ্যা ও মোট আমানত উভয়ই বেড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা গত কয়েক দশকে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮ সালে দেশে কোটিপতি হিসাব ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি, যা ২০২০ সালে বেড়ে ৯৩ হাজার ৮৯০টি হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টিতে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে মাত্র ৫ জন কোটিপতি ছিল, যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।