বাংলাদেশ ব্যাংক তিনটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে

এনআরবি কমার্শিয়াল, এনআরবি ও মেঘনা ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতের তিনটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো—এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক এবং মেঘনা ব্যাংক। বুধবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নেয় এবং এটি বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক তিনটির পরিচালনা পর্ষদে অনিয়ম এবং ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নানা জটিলতা উঠে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বিশেষ পর্যালোচনা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।
সরকার পতনের পর থেকে এ নিয়ে ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে কিছু অনিয়ম এবং খারাপ ব্যবস্থাপনার কারণে সরকার বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছিল। বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোর পর্ষদও পুনর্গঠন করা হয়।
এই তিনটি ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমালকে সরিয়ে ব্যাংকটির নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক এমডি আলী হোসেন প্রধানিয়াকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক এমপি এএইচ এন আশিকুর রহমানকে সরিয়ে প্রাণ গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরীকে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমানকে অপসারণ করে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ ওবিইকে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।
এছাড়া, প্রতিটি ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদে সাতজন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নতুন সদস্যরা বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তারা। এই পরিবর্তনগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা নিশ্চিত করতে চায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করছে, যাতে ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা, সুশাসন এবং গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, অনেক ব্যাংকের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, যা দেশীয় অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং ব্যাংকিং খাতে কার্যকরী পরিবর্তন আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আগেও বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে।
এমন পদক্ষেপগুলি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি সুসংবদ্ধ ও সুশাসিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে আস্থা বৃদ্ধি, নৈতিকতা এবং সুশাসন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, এবং এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হচ্ছে।