টিআইএন নেওয়ার পরে আর ‘ঘুমাইতে পারবেন না’: এনবিআর চেয়ারম্যান

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে বুধবার প্রাক-বাজেট আলোচনায় বক্তব্য রাখেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
একবার কেউ কর শনাক্তকরণ নম্বর-টিআইএন নিলেই তারপর থেকে এনবিআর কর্মকর্তারা তাকে রিটার্ন জমা দিতে নানাভাবে তাগিদ দেবেন তুলে ধরে সংস্থার চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু তিনি ‘ঘুমাইতে পারবেন না’।
বুধবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে এনবিআরের এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় রাজস্ব বাড়াতে নানামুখী কর্মসূচির কথা তুলে ধরে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দেশে এক কোটির বেশি মানুষের টিআইএন থাকলেও আয়কর বিবরণী দেন তাদের মধ্যে কেবল ৪০ শতাংশের মত।
বিভিন্ন সেবা গ্রহণের সময় আয়কর বিবরণী বা আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ-পিএসআর দেখাতে হওয়ায় সেসব সেবার গ্রাহক কমছে, এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর প্রধান বলেন, “অনলাইন রিটার্ন হওয়ার কারণে এখন খুব সিম্পলি রিটার্ন দেওয়া যায়। তার পরেও এটাকে আমরা বিবেচনায় নিলাম। আমরা যেটা করছি পিএসআর-এ, যাদের ই-টিআইএন দিতে হত, তাদের সবাইকে পিএসআরে নিয়ে আসছি। এবার এটাকে স্প্লিট করব।
“যেগুলোর আমরা রিটার্ন এখনই চাই, না হলে হবে না, সেগুলোকে আমরা পিএসআরে নিব। আর কিছুতে আমরা রাখব ই-টিআইএন নেওয়ার ব্যাপারে যে টিআইএন দেখালেই হবে।”
আগে টিআইএন থাকলেও যারা আয়কর রিটার্ন দিতেন না তাদেরই মূলত করের আওতায় আনতে পিএসআর চালু করা হয়েছিল তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন থেকে কর্মকর্তারা সক্রিয় থাকায় সে সুযোগ থাকবে না।
“বাকিটা আমাদের লোকেরা…, টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু তিনি ঘুমাইতে পারবেন না। আমাদের অফিসাররা আপনাকে নোটিস করবে। তাকে রিটার্ন দেওয়ার জন্য বলবে। আলটিমেটলি সে একই কথা। তার থেকে পিএসআর দেওয়াই ভাল। তারপরও আপনারা বলছেন, আমরা ওইভাবে কাজ করব।”
যারা কম হারে কর দেন আসছে বাজেটে তাদের ওপরও করের বোঝা বাড়বে বলে সতর্ক করে দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, এনবিআরের লক্ষ্য হচ্ছে, কর অব্যাহতি থেকে বের হয়ে আসা। কারণ এনবিআর যে পরিমাণ কর আদায় করে সমপরিমাণ ছেড়ে দেয়, অব্যাহতি দেয়।
“আমাদের ওপর কিন্তু হিউজ প্রেসার তৈরি হচ্ছে, সে কারণে যারা যারা একজেম্পটেড ইনকামে (কর অব্যাহতির সুবিধাপ্রাপ্ত) আছেন, তাদের একজেম্পশন উঠে যাবে ধীরে ধীরে। এবারই একটা বড় উদাহরণ আপনারা দেখতে পাবেন। বেশকিছু একজেম্পশন উইথড্র করেছি। বাকিগুলো আপনারা বাজেটে দেখতে পাবেন।”
‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশে’ এত বৈষম্য থাকবে কেন প্রশ্ন তুলে আবদুর রহমান বলেন, “যারা রিডিউসড রেটে ট্যাক্স (হ্রাসকৃত হারে কর) দেয়, আপনি যদি বলেন যে আপনার একটা সাপোর্ট লাগবে, সেটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। সারা জীবনের জন্য হতে পারে না। আপনি পাঁচ বছর সাপোর্ট পেয়েছেন বা ছয় বছর, দশ বছর সাপোর্ট পেয়েছেন, শুড বি এনাফ।
“এখন আপনাকে রেগুলার রেটে দিতে হবে।… রেটটা একটু বাড়বে। আপনারা যেহেতু আছেন, আমরা সবাই আছি, আপনারা মাথায় নিয়ে যান, রিডিউসড রেটে যারা ট্যাক্স দেন তাদের রেটটা একটুখানি বাড়বে। বৈষম্যটা আমরা কমানোর চেষ্টা করব। রেভেনিউ যেমন কমবে তেমন অন্য জায়গা থেকে বাড়বে।”
তার ভাষায়, “মোটামুটি এবারের আইনে (অর্থ আইন) ব্যবসায়ীদের দাবিদাওয়ার প্রতিফলন থাকবে। রেশনালাইজেশনের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে টিডিএস (উৎসে কর কর্তন) এবং অন্যান্য জায়গায়। আবার অব্যাহতির ক্ষেত্রে যারা দীর্ঘদিন অব্যাহতি পেয়ে আসছেন, তাদের ক্ষেত্রে, তাদেরকে একটু নতুন করে চিন্তা করতে হবে। না, এখন আমাদের ট্যাক্সটা দেওয়া শুরু করতে হবে। এটা আমাদের মোদ্দা আকারের মেসেজ।”
রপ্তানিতে ০.৫ শতাংশ উৎসে করের প্রস্তাব
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ এক উপস্থাপনায় এনবিআরের কাছে তাদের আগামী বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। উপস্থাপনাটি তুলে ধরেন ‘ফিলিপ মরিস বাংলাদেশ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা-উর-রহমান মাহমুদ।
রপ্তানির ক্ষেত্রে উৎসে করের হার আগের মত ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।
আমেরিকান চেম্বার ৫ লাখ টাকার নিচে ক্রেডিট কার্ড ইস্যুর জন্য আয়কর রিটার্ন স্লিপ জমা দেওয়ার বাধ্যতা বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে।
ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষে প্রস্তাবনায় ভারত থেকে আসা পণ্য সরাসরি জাহাজে বা বাল্কে নারায়ণগঞ্জে এনে খালাসের সুযোগ চেয়ে বলা হয়, এতে করে আমদানি খরচ অনেকটাই কমবে।
এছাড়াও আমদানি পণ্যের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে পণ্যের মান, ব্র্যান্ড, মডেল দেখা ও সমজাতীয় পণ্যের তিন মাসের ঘোষিত মূল্য আমলে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার।
এক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাবনা হচ্ছে, পণ্যের পরিমান কম বেশি হলে মূল্য নির্ধারণের তা বিবেচনা করতে হবে। যেমন- ১০ টন এবং ১০০ টন সমজাতীয় পণ্যের আমদানি মূল্য এক হবে না। শুল্কায়নের সময় পণ্যের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণের বিষয়টিকে অগ্রধিকার দিতে হবে।
এনবিআরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেন মেটলাইফ, সিটি ব্যাংক, কোকাকোলা বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা।