বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের দুর্দশা ও ঘুরে দাঁড়ানোর আশাবাদ

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, পৃথিবীর কোনো দেশে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে আর্থিক খাতের সর্বনাশ হয়নি, কিন্তু বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাংক লুটের নজির দেখা গেছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সাতটি ব্যাংক ব্যবহার করা হয়েছে এবং অর্থপাচার করা হয়েছে।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় নীলফামারী সরকারি কলেজের হলরুমে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান।
গভর্নর বলেন, "একটি পরিবার আইনবহির্ভূতভাবে সাতটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। আইন অনুযায়ী, একটি পরিবারের পক্ষে একটি ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার রাখা সম্ভব নয়, তবে ইসলামী ব্যাংকের ৮০ শতাংশের বেশি শেয়ার এস আলম গ্রুপের একটি পরিবারের হাতে কীভাবে গেল? এটি রাষ্ট্রের ব্যর্থতা।"
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, কিছু ব্যাংক ইতিমধ্যে ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক অন্যতম, কারণ তারা জানে কীভাবে একটি ভালো ব্যাংক পরিচালিত হতে পারে। তিনি বলেন, "ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফেরানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারি, তাহলে সকল ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবে।"
তিনি আরও আশ্বস্ত করে বলেন, "যে কোনো পরিস্থিতিতেই আমরা প্রতিটি ডিপোজিটারের টাকা ফেরত দেবো। সাময়িকভাবে কিছু গ্রাহক তাদের অর্থে অ্যাক্সেস না পেলেও, প্রক্রিয়া শেষে অল্টারনেট অ্যাসেটের মাধ্যমে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আমরা ব্যাংকগুলোকে পুনর্গঠন করব এবং এমনভাবে ম্যানেজমেন্ট গড়ে তুলব, যাতে তারা শক্তিশালী ব্যাংকে পরিণত হতে পারে। সাধারণত চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগলেও, পরবর্তী সরকার এটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারবে।"
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রসঙ্গে গভর্নর জানান, লাখ লাখ কোটি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, "আমরা একাধিক জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করেছি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা নিচ্ছি। বিদেশে অবস্থিত পাচারকৃত সম্পদ জব্দের জন্য ‘স্টোলেন অ্যাসেট ট্রেসিং’ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে সাধারণত চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে। মালয়েশিয়া ও নাইজেরিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। বর্তমান সরকার এ কাজ শুরু করলেও, পরবর্তী সরকারের দায়িত্ব হবে এটি সম্পন্ন করা।"
ড. আহসান এইচ মনসুরের বক্তব্য বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সংকট ও পুনর্গঠনের সম্ভাবনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেয়। তিনি সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যা ভবিষ্যতে দেশের আর্থিক খাতকে সুসংহত করতে সহায়ক হবে।