রিটার্ন দাখিল না করা টিআইএনধারীরা নোটিস পাবেন: এনবিআর চেয়ারম্যান
কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকার পরও যারা দীর্ঘদিন রিটার্ন দাখিল করেননি, তাদের নোটিস পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
রোববার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক ‘নীতি সম্মেলনে’ তিনি বলেন, “আমরা কাজ শুরু করেছি। আপনারা এটা টের পাবেন যখন আপনাদের বন্ধু-বান্ধব ট্যাক্সের নোটিস পাবে।
“দীর্ঘদিন ধরে উনার টিআইএন আছে, উনি জীবিত আছেন, উনার ব্যবসা-বাণিজ্য আছে, অথচ উনি রিটার্ন দেন না; আমরা এই জায়গাটায় হাত দিচ্ছি।”
‘খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক দাম: বাজার তত্ত্বাবধানের কৌশল অনুসন্ধান’ শিরোনামে এই ‘নীতি সম্মেলন’ (পলিসি কনক্লেভ) আয়োজন করে বণিক বার্তা।
সেখানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের ওপর ক্রমাগত চাপ আসে; নানা চাপ। প্রথম চাপ হচ্ছে আমার দেশের যে আর্থিক প্রয়োজন, সেটা মেটানো।
“বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের যে ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত, এটা পৃথিবীর সবচেয়ে নিচের দিকের একটা। আমাদের আশপাশের দেশের তুলনায় এটা অনেক কম।”
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমার ট্যাক্স নেট যত বড় হওয়ার কথা ছিল, ততটা বড় নয়। বিশেষ করে আয়কর; ধনীদের আয়কর দেওয়ার কথা; কিন্তু আমাদের কোষাগার এখনও গরিবের টাকায় পূর্ণ হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “১৯৭২ সালে যখন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট আমরা যখন করি, যখন রেভিনিউ কালেকশন করা হয়, যা আদায় হত তার ৯০ শতাংশ গরিব মানুষের করের টাকা থেকে আসত।
“সেই পরিস্থিতির খুব যে উন্নতি এখনও হয়েছে, তা নয়। এখনও করের দুই তৃতীয়াংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে। আয়কর দেয় মাত্র এক তৃতীয়াংশ লোক।”
আবদুর রহমান বলেন, “আমাদের রেকর্ডে ১ কোটি ১১ লাখ করদাতা আছে। তার মধ্যে ৬০ শতাংশ ট্যাক্স রিটার্ন দেন না। উনারা যে দেন না, এজন্য উনারা কোনো সমস্যাও মোকাবেলা করেন না।
“যারা নিয়মিত কর দেন, তাদের আমরা চিনি, তাদের আমরা আরও বেশি চাপ দিই। তারা আরও বেশি বিরক্ত হয়।এখান থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে চাই।”
আবদুর রহমান খান বলেন, “আমি যদি ট্যাক্সের কথা বলি, জিডিপি রেশিও ৭ দশমিক ১ । আমরা যখন ঋণ নিই, প্রায় ক্ষেত্রেই আমরা জিডিপির কত শতাংশ ঋণ, এর সঙ্গে উন্নত বিশ্বের তুলনা করে বলি, আমরা খুব ভালো আছি; আরও বেশি ঋণ নেওয়া যায়।
“কিন্তু, বাস্তবতা হল, উন্নত বিশ্ব জিডিপির প্রায় ৪৫ শতাংশ কর আদায় করে। ফলে ঋণ বেশি হলেও তাদের পরিশোধের সক্ষমতা আছে। কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের আয় অত্যন্ত কম; মাত্র ৭ শতাংশ।”
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
এতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) আবদুর রহিম খান বক্তব্য দেন।
প্যানেল আলোচনায় প্রবিধান ও সরকারি সংস্থা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন এএইচএম আহসান, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন চেয়ারম্যান (সচিব) মইনুল খান, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফয়সল আজাদ।
পণ্য আমদানি, সরবরাহ ও ব্যবসাসংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও এমডি মোস্তফা কামাল এবং টি. কে. গ্রুপের গ্রুপ ডিরেক্টর মোহাম্মাদ মুস্তাফা হায়দার।
অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন ও বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা করেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
খুচরা বাজার নিয়ে বক্তব্য দেন এসিআই লজিস্টিকস লিমিটের (স্বপ্ন) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির ও কারওয়ান বাজার ২নম্বর কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদ আহমেদ রাসেল।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে আলোচনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন।