আরও ১০০০ কোটি টাকা চায় ন্যাশনাল ব্যাংক
নগদ টাকার সংকটে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংক তারল্য সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আরও এক হাজার কোটি টাকা চায়।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থেকে চার হাজার কোটি টাকা সহায়তা পেয়েছিল ব্যাংকটি।
ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদেরকে প্রথমে বলেছিল, পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা দেবে। কিন্তু তারা চার হাজার কোটি টাকা দিয়েছিল। তাই আমরা আবার এক হাজার কোটি টাকা চেয়েছি।
”গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করার জন্যই এই টাকা চাওয়া হয়েছে।"
আগের টাকা কীভাবে কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে তা বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে চেয়েছে তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেই ব্যাখ্যা দিতে আমরা একটা প্রেজেন্টেশন তৈরি করছি।”
আগের পর্ষদের ‘দুর্নীতির’ কারণেই ন্যাশনাল ব্যাংক ধুঁকছে অভিযোগ করে চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, এখন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটিকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আরও এক হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
এবার ১০ শতাংশ সুদে তারল্য সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছে গত দেড় দশক ধরে ব্যবসায়িক গোষ্ঠী সিকদার গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ ব্যাংক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও নতুন অর্থ দেওয়ার অনুমোদন দেয়নি বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
এর আগে ২০২৪ সালের নভেম্বরে ব্যাংকগুলোতে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সহায়তা দেওয়া হয়েছে টাকা ছাপিয়ে।
ন্যাশনাল ব্যাংক ছাড়া তখন টাকা পাওয়া অন্য ব্যাংকগুলো হল- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক।
দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন কোনো ব্যাংকে অবাধে টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হবে না। তবে সেই সহায়তা দেওয়ার পর গভর্নর বলেছিলেন তার সেই সিদ্ধান্ত থেকে তিনি সরে এসেছেন।
তবে তিনি এও দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে টাকা উঠিয়ে সেই টাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দিচ্ছে। তাই পুরোপুরি টাকা ছাপানো বলা যায় না বলেও তিনি দাবি করেছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটা ছাপা টাকার সমতুল্য। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে যে টাকা পাওয়া গেছে তার থেকে বহুগুণ বেশি ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া পদ্মা ব্যাংক ১৩০০ কোটি টাকা এবং জনতা ব্যাংক ১০ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা চেয়েছে। তবে সেগুলোর অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, এভাবে ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হলে দায় বাড়তেই থাকবে। তাতে স্বল্প মেয়াদে কিছু সমস্যা সমাধান হলেও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে।
এর আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির পরিচালক ও কর্মকর্তাসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কাগুজে বিল সৃষ্টি করে ঋণের ৪৫৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় ওই মামলায়। আসামি করা হয় দীর্ঘদিন ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণে থাকা সিকদার পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে।
সিকদার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিবাদের জেরে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে। তার সময়ে ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক, ইউসিবির সঙ্গে এনবিএলকে একীভূত করার আলোচানা শুরু হয়।
আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই আলোচনা আর এগোয়নি। এর মধ্যে ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়মে ধুঁকতে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়ে।
অগাস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয় তখন এটির পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ ছিল চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী এস আলমের। পরে এ ব্যাংকের পুরনো উদ্যোক্তা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু চেয়ারম্যান হিসেবে ফিরে আসেন।