বুধবার ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, পৌষ ২৫ ১৪৩১, ০৮ রজব ১৪৪৬

অর্থনীতি

আন্দোলন-সংঘাতের ধাক্কা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে,জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১.৮১%

 প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ৬ জানুয়ারি ২০২৫

আন্দোলন-সংঘাতের ধাক্কা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে,জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১.৮১%

রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘিরে সহিংসতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বড় প্রভাব পড়েছে মোট দেশজ উৎপাদনে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৮১ শতাংশ; যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই হার ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ ছিল।

সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, অস্থিরতার তিন মাসে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ২ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৮ দশমিক ২২ শতাংশ।

জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে কৃষি ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধিও কমেছে। কৃষিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ১৬ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর সেবা খাতে এবার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা আগের বছর ৫ দশমিক ০৭ শতাংশ ছিল।

ক্ষমতার পালাবদলে শিল্পে নৈরাজ্য, অস্থিরতা আর উৎপাদনে স্থবিরতার কারণে এবার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কঠিন হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।

চলমান পরিস্থিতিকে ‘অনিশ্চিত’ বর্ণনা করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মধ্যবর্তী হিসাবে ৪ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। এর আগে সংস্থাটি ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছিল।

অন্যদিকে এডিবি এপ্রিলে বলেছিল, চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। তবে সেপ্টেম্বরে তারা তা ৫ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য উত্থাপিত বাজেটে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে পরিকল্পনা সাজায়। তবে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের দিকে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

প্রবল গণআন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এক মাসের বেশি সময় ধরে উৎপাদন ও ব্যবসা বাণিজ্য বিঘ্নিত হয়। ৮ সেপ্টেম্বর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরও আইনশৃঙ্খলা ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ছিল কিছুদিন।

প্রবৃদ্ধির গতি কমে বাড়বে মূল্যস্ফীতি: পূর্বাভাস এডিবির

দৃশ্যত অকার্যকর পুলিশি ব্যবস্থার মধ্যে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত পোশাক শিল্পে অস্থিরতা ছড়ায়। একের পর এক কারখানায় উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ার মধ্যে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কার্যাদেশ বাতিলের কথা সরকারের তরফে জানানো হয় সে সময়।

মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির এলসি কমার তথ্যও সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। অসন্তোষ ছিল ওষুধসহ অন্যান্য শিল্প শ্রমিকদের মধ্যেও। দেশে পানির ট্যাংক ও টায়ার বাজারের অন্যতম সরবরাহকারী গাজী টায়ারস ও গাজী ট্যাংক কারখানা লুটপাটের পর আগুন দেওয়া হয়।

দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো ছিল না তখন। ১০টিরও বেশি ব্যাংকে বেতনের টাকাও তুলতে পারছিলেন না গ্রাহকরা।

ওই সময়টায় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। নেতিবাচক ধারায় ছিল রাজস্ব আহরণ। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে সময়টিতে নেতিবাচক খবরের মধ্যে এবার দেশের সার্বিক উৎপাদনই কমে যাওয়ার তথ্য এল।