রেমিটেন্সের জোয়ারে ডিসেম্বরে এল ২.৬৪ বিলিয়ন, বাড়ল ৩৩%
বৈধ পথে প্রবাসী আয় বেশি আসার ধারা বজায় থাকার তথ্য মিলছিল আগের সপ্তাহেই; মাস শেষের হিসাবেও তা ঠিকই থাকল, সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বরে এল ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার।
একক মাসে এত বেশি রেমিটেন্স এল সাড়ে তিন বছর পর। ২০২০ সালের জুলাই মাসের পর এক মাসে বৈধ পথে এত বেশি প্রবাসী আয় পাঠাননি প্রবাসীরা। ওই মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ডিসেম্বরের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। এতে দেখা যায় সদ্য শেষ হওয়া মাসে যে রেমিটেন্স এসেছে তা ২০২৩ সালের একই মাসের চেয়ে ৩২ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।
এ নিয়ে টানা পাঁচ মাস দুই বিলিয়নের ওপর রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আর চলতি বছর মার্চ ও এপ্রিল ছাড়া প্রতি মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। মাঝে জুলাইতে শুধু তা এর নিচে নেমে যায়।
ডিসেম্বরের রেমিটেন্সে ভর করে ২০২৪ সালে মোট রেমিটেন্স এসেছে ২৬ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে এসেছিল ২১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রেমিটেন্সের প্রবাহ বেড়েছে ২২ দশ্মিক ৪৪ শতাংশ।
একক মাস ডিসেম্বরে ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্সকে অনেকে ব্যাংকার ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স বলে তথ্য দিচ্ছেন। একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটাই একক মাস হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। এর আগে সর্বোচ্চ ছিল ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার (২০২০ সালের জুলাই)।
তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটাই যে সর্বোচ্চ তা ডেটা চেক না করে বলে দেওয়া উচিত হবে না। এটা বৃহস্পতিবার বলা যেতে পারে।
রেমিটেন্সের সুবাতাসের বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হুসেইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদেশে কারও কারও ৮০ মিলিয়নের অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এসব অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর হুণ্ডির মাধ্যমে ডলার পাঠানো কমেছে। এর বদলে অফিশিয়াল চ্যানেলে (ব্যাংকিং) ডলার বেশি পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
“আমরা লক্ষ্য করছি আন্ডার ইনভয়েসিং কমেছে। তাতে হুণ্ডি বাজার থেকে যে হুণ্ডি কমেছে সেটা ব্যাংকিং চ্যানেলে চলে আসছে। আশা করছি সামনে এই পদ্ধতি আরও বেশি উন্নতি হবে।”
আরেক ব্যাংকার বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলেই এখন ডলারের দাম বেশি মিলছে। যে কারণে এখন কেউ ঝুঁকি নিয়ে ভিন্ন পথে দেশে টাকা পাঠাতে চাইছেন না। আড়াই শতাংশ প্রণোদনা আগেও ছিল, এখনও আছে। তবে পাচার ও হুণ্ডি কমায় ব্যাংকিং চ্যানেলে বেড়েছে রেমিটেন্স।
ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স বাড়ার কারণ হিসেবে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, রেমিটেন্সে ডলরের দর বেড়ে যাওয়াই বড় কারণ। মাঝে রেমিটেন্সের দর বেড়েছে, আবার কমেছে। এখন টানা ডলার দর বাড়ার জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্সের প্রবাহ বেড়েছে।
ডলারের দর বাড়তে বাড়তে সদ্য সমাপ্ত মাসের মাঝামাঝি থেকে ১২৮ টাকাতেও উঠে যায়। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো ১২৬ দরেও রেমিটেন্স কিনেছে বলে খবরে এসেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্সের দর সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা ঠিক করে দেয়।
দর বাড়তে থাকায় বেশ কয়েক মাস ডলার বাজার স্থিতিশীল থাকার পর আবার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে রেমিটেন্স ও রপ্তানিতে সব ব্যাংককে একই দর দেওয়ার মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এছাড়া ডলার কেনাবেচায় সর্বোচ্চ ব্যবধান (স্প্রেড) এক টাকা রাখার কথাও বলেছেন তিনি।
এসব নির্দেশনা না মানলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে জরিমানার মুখে পড়তে হবে বলে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।
গত সোমবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ট্রেজারি প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সভায় অংশ নেওয়া একাধিক ব্যাংকার জানিয়েছেন।
একটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, তবে রেমিটেন্স ও ডলার দর কত হবে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক বলে দেয়নি।