ভবিষ্যতে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা কমানো হবে: অর্থ উপদেষ্টা
ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা হিসেবে যেসব সুবিধা বা করছাড় দেওয়া হয়, ভবিষ্যতে তা কমিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
ঢাকা সফররত আইএমএফ দলের সঙ্গে রোববার সকালে বৈঠক করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা কর অব্যাহতি কমানোর ওপর জোর দিয়েছে।
রোববার ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) বার্ষিক সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেছেন, “সারা জীবন কি কর ছাড় দিতেই থাকব- এটা সম্ভব নয়। যুক্তি সঙ্গত কর দিতে হবে, আর অযৌক্তিক কিছু থাকলে, সেখানে দেওয়া হবে।”
পুঁজিবাজারে ‘কারসাজির’ জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে আরও দুই বছর আগেই জরিমানা করা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দুর্নীতি বন্ধ করতে সক্ষম হয়নি। ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী ও নানান রকমের প্রতিষ্ঠান আইন ভঙ্গ করেছে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়নি।
“তাই দোষারোপ শুধু রাজনীতিদের দেওয়া যাবে না, এসব নিয়ন্ত্রক সংস্থাদেরও দোষ রয়েছে।”
নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নানা সময়ে ডেটার তথ্যে ‘ম্যানুপুলেট’ করেছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালেহউদ্দিন বলেন, “এসব জায়গায় আগে যোগ্য ব্যক্তিদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি। তারা কাজ করতে চাইলেও প্রভাব খাটিয়ে তাদের কাজ করতে দেওয়া হত না।”
পনেরো বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুণগান হয়েছে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা গুরুত্ব পায়নি মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “এটা নিয়ে প্রশ্নও তোলা হয়নি।”
তিনি বলেন, “বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধিতে নজর দেওয়া জরুরি বলে আমি মনে করি। খাদের কিনারায় পৌঁছেছে, তা না। তবে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমছে না ও ব্যাংকিং খাত নিয়ে সমস্যা রয়েছে।”
সালেহউদ্দিন মনে করেন, ডলার দরের স্থিতিশীলতা আসছে। আগের মত ওঠা-নামা করছে না। বাজারে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি কাজ করছে। আর সুদের হার বাড়ানো হয়েছে কারণ পলিসি রেট বাড়ানো হয়েছে।
“রাজনৈতিক সমঝোতা অনেক কঠিন, চাঁদাবাজি সমঝোতা অনেক সহজ। প্রত্যেক বাজারে দুই-তিন রকমের চাঁদাবাজ আছে।”
মনেটারি পলিসি ও ফিসক্যাল পলিসির মধ্যে একটা কর্ডিনেশন তৈরি করতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।
রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বক্তব্য দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ইউএসএআইডি এর মিশন ডিরেক্টর রিড এশলিম্যান।
দেবপ্রিয় বলেন, “দেশের রাজনীতিকরা পথরেখা চাচ্ছেন কীভাবে নির্বাচন করবেন। কিন্তু রাজনীতির পথরেখা আমরা কতখানি সুগম করতে পারব, আরও কতটা গভীর করতে পারব, তা পুরোটা নির্ভর করবে আমরা মানুষকে কতখানি স্বস্তি দিতে পারব, সেটার ওপর।
“যদি আমি মানুষকে অর্থনৈতিক স্বস্তি দিতে না পারি, যদি আমি মানুষকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে সুরক্ষা দিতে না পারি, তাহলে মানুষের ওই সংস্কারের জন্য যতই ভালোবাসা থাকুক, ধৈর্য থাকবে না।”