আমাদের চেষ্টার কারণে পণ্যের ঘাটতি টের পাওয়া যাচ্ছে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাজারে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের চেষ্টায় ভোক্তারা টের পাচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, ইআরএফ আয়োজিত ‘ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমাদের অবস্থান এমনভাবে তৈরি করব যাতে জোয়ার আসুক, ভাটা আসুক, আমাদের অবস্থান যেন স্থিতিশীল থাকে।”
একদিন আগে সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে ৮ টাকা বাড়ানোর ব্যাখ্যায় শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “সিন্ডিকেট বলতে যা হচ্ছে তা চিনি হোক, চাল হোক, পেঁয়াজ হোক তা মুষ্টিমেয় কয়েকজন উৎপাদক, সরবরাহকারী নিয়ন্ত্রণ করেন।”
এস আলম গ্রুপের দিকে তিনি ইঙ্গিত করে বলেন, “এর মধ্যে সর্ববৃহৎ যে, তিনি কিন্তু দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। তিনি বাজারের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন, আটটা-দশটা ব্যাংকও তার নিয়ন্ত্রণে ছিল।
“তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ায় যে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব কিন্তু আপনারা (ভোক্তা) টের পাচ্ছেন না। আমাদের চেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে।”
দেশের ভোগ্যপণ্যর বড় সরবরাহকারী চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো হাতছাড়া হওয়ায় গ্রুপটির ভোগ্যপণ্য ব্যবসাও থমকে আছে।
সে দিকে ইঙ্গিত করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “১৫ বছরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুকুর চুরির মধ্য দিয়ে বিপুল অর্থ দেশের বাইরে পাচার হয়েছে।”
টিসিবির কার্ড ৫৭ লাখ
সারাদেশে টিসিবির এক কোটি কার্ডের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রি করা হয়। অনিয়ম খুঁজে পাওয়ায় প্রায় অর্ধেক কার্ড বাতিল করে ৫৭ লাখে নামিয়ে আনা হয়েছে। এসব কার্ড প্রকৃত ব্যক্তি পাচ্ছে কি না, তা দেখতে সরেজমিনেও যাওয়ার কথা বলেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের চেয়ে আয়তনে ছোট নেদাদরল্যান্ডস প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার এবং পাশ্ববর্তী থাইল্যান্ড ৩৬ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। সেখানে আমাদের কৃষি পণ্যের মাত্র ১ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত হয়। কেন আমরা পিছিয়ে, সেসব বিষয় নিয়ে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “পণ্যের দাম কমাতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই সরকারের মতো ট্রান্সপারেন্ট (স্বচ্ছ) সরকার আগে কখনও ছিল না। পূর্ববর্তী সরকার উন্নয়নের গল্প করতে গিয়ে বাজারে ভুল তথ্য ছড়িয়ে গেছে।”
গণমাধ্যমকে সঠিক তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানান প্রেস সচিব।
পুরস্কার পেলেন যারা
এবার কৃষি অর্থনীতির উপর প্রতিবেদন তৈরি করে দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন ও টেলিভিশনের সেরা ১০ জন ‘ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ পান।
দৈনিক পত্রিকা শ্রেণিতে যৌথভাবে প্রথম পুরস্কার পান আমাদের সময়ের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জিয়াদুল ইসলাম ও সময়ের আলোর অর্থনীতি বিষক সম্পাদক আলমগীর হোসেন।
যৌথভাবে দ্বিতীয় হন দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের দুই বিশেষ প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন হারুন ও এফএইচএম হুমায়ূন কবির। তৃতীয় হন কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জিয়াদুল সাহানোয়ার সাইদ শাহীন।
অনলাইন শ্রেণিতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন জাগোনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রধান প্রতিবেদক ইব্রাহীম হুসাইন অভি। দ্বিতীয় হন যুগান্তরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মিজানুর রহমান চৌধুরী।
এছাড়া টেলিভিশন শ্রেণিতে প্রথম হন যমুনা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তৌহিদ হোসেন পাপন এবং যৌথভাবে দ্বিতীয় হন একুশে টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তৌহিদুর রহমান ও ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হরিপদ সাহা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।