বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে নতুন নোট ‘৬ মাসের মধ্যে’
আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন নকশায় টাকা ছাপা হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা।
বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকারের অনুমোদন পাওয়া গেছে। এখন বাকি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
“আশা করছি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাজারে আসতে পারে নতুন নকশার টাকা।”
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে নতুন নোট চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে যুক্ত করা হবে ধর্মীয় স্থাপনা, বাঙালি ঐতিহ্যসহ ‘জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি’।
আপাতত ২০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের নকশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। টাঁকশাল এরই মধ্যে নোট ছাপানোর কার্যক্রম শুরু করেছে।
যেভাবে ছাপা হয় নতুন নোট
বাংলাদেশের মুদ্রা ছাপানোর কাজটি করে দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড, যা টাঁকশাল নামে পরিচিত। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা পেলেও ১৯৮৮ সালের জুন মাসে এক টাকা ছাপানোর মধ্য দিয়ে এ প্রেসের কার্যক্রম শুরু হয়।
ওই বছরের নভেম্বর মাসে ১০ টাকার নোটও ছাপানো হয় সেখানে। প্রতিটি নোট ছাপানোর আগে এর নকশা অনুমোদন করে সরকার। সেজন্য দরপত্র ডেকে চিত্র শিল্পীদের দিয়ে নোটের নকশা করানো হয়।
নকশা চূড়ান্ত হলে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কাগজ, কালি ও প্লেট তৈরি করা হয়। নকশা অনুযায়ী বিদেশ থেকে প্লেট তৈরি করে আনার পর ছাপার কাজটি করে টাঁকশাল।
জানতে চাইলে টাকশালের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে নতুন করে নোট ছাপতে গেলে দুটো কাজ করা যায়। সরকার যেহেতু কোনো নোট বাতিল বা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়নি, সেহেতু যে মূল্যমানের নোট ছাপানো হবে, তা পুরনো নকশায় ছাপানো যায়।
“সেক্ষেত্রে নকশা যেহেতু অনুমোদন করা আছে, নতুন করে প্লেট বানিয়ে নিয়ে এলেই ছাপানো শুরু করে দেওয়া যাবে।”
সরকার যদি নতুন নকশায় টাকা ছাপাতে চায়, তাহলে দরপত্র দিয়ে নোটের নকশা তৈরি, যাচাইবাছাই, নিরাপত্তা ইস্যু নিষ্পত্তি করে ছাপার প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ বলে জানান ওই কর্মকর্তা। সেক্ষেত্রে সময় ও খরচ দুটোই বাড়বে।
এ পক্রিয়ায় টাকা ছাপতে গেলে ১৮ থেকে ২০ মাসের মত সময় লাগবে। আর পুরনো নকশায় ছাপালে সেটা ছয় মাসের মধ্যে সম্ভব বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় টাকা ছাপায় না। সাধারণত একটি নোট ৪-৫ বছর চলে। এরপর তা পুনঃমুদ্রণ করা হয়। ছোট মানের নোট বেশি হাতবদল হওয়ায় তা দ্রুত নষ্ট বা ব্যবহার অনুপযোগী হয়।
বছরের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা মুদ্রণ বা উৎপাদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রেখে দেওয়া হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী সেখান থেকে যখন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বাজারে ছাড়া হয়, তখনই তা মুদ্রা বা টাকায় পরিণত হয়। তার আগে সেটা টাকা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি সার্কুলেশন প্রতিবেদনে যোগ করা হয় না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে নতুন নোট ছাপতে। তার আগের অর্থবছরে খরচ ছিল ৩৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।
সবশেষ নতুন নকশায় ২০০ টাকার নোট চালু হয় ২০২০ সালে। ওই নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবিতে নতুন রূপ দেওয়া হয়।
আগে ছাপানো নোটে ব্যবহৃত বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে আরও স্পষ্ট করে দুই ধরনের ছবি ব্যবহার করা হয় ২০২০ সাল থেকে। এরপর ছাপানো সব নোটে ওই দুই ধরনের ছবিই ব্যবহার করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া সবশেষ নোট ছাপা হয়েছিল ২০০৯ সালে। তখন গভর্নরের দায়িত্বে থাকা সালেহ উদ্দিন আহমেদ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা। ওই সময় ছাপা লাল রঙের ৫০০ টাকা এবং এক হাজার টাকার কিছু নোট এখনও দেখা যায়।