বৃহস্পতিবার ০৩ এপ্রিল ২০২৫, চৈত্র ১৯ ১৪৩১, ০৪ শাওয়াল ১৪৪৬

সংস্কৃতি

মঙ্গল শোভাযাত্রা বর্জনের সিদ্ধান্ত চারুকলার ২৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের

 প্রকাশিত: ১০:১১, ২৭ মার্চ ২০২৫

মঙ্গল শোভাযাত্রা বর্জনের সিদ্ধান্ত চারুকলার ২৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের

চারুকলায় পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি

এবারের পহেলা বৈশাখের আয়োজনকে ‘স্বজনপ্রীতিদুষ্ট ও দেশের পরিবর্তনকালীন সময়ে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী’ আখ্যায়িত করে এ আয়োজন ও আয়োজক কমিটিকে বর্জনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন চারুকলার ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

বুধবার বিবৃতি দিয়ে এই শিক্ষার্থীরা বলেছেন, “এবারের বৈশাখ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বৈশাখ। এ আয়োজনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের চাটুকারিতাপূর্ণ মনোভাবের কারণে আমরা শিক্ষকদের আয়োজন করা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা ও শোভাযাত্রা সমর্থন করছি না।”

তবে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম চঞ্চল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “যারা বিবৃতি দিয়েছেন, তারা চারুকলায় এখন প্রাক্তন। আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়েই চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। আর্থিক স্বচ্ছতা এবং কাজের শৃঙ্খলার জন্য একাধিক সভা করা হয়েছে এবং যথানিয়মেই মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে।”

চারুকলা অনুষদের ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ পক্ষ থেকে ‘মঙ্গলবার শোভাযাত্রা নিয়ে স্পষ্ট বিবৃতি’ শিরোনামে বিবৃতিটি সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়।

বিবৃতিতে প্রেরকের জায়গায় নির্দিষ্ট কারো নাম না উল্লেখ করে লেখা হয়, ২৬তম ব্যাচ (চারুকলা ৭০)।

২৬ ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। তবে তারা নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।

চারুকলা অনুষদের একজন শিক্ষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীরা বর্জন করেছে বলে শুনেছি। আর শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগ তুলেছে, সেটা ঠিক আছে। এবার অনেক বেশি রাজনৈতিক হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন। এতে সবার অংশগ্রহণের যে স্বতস্ফূর্ততা, তা নষ্ট হয়ে গেছে।”

২৬তম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের ব্যাচ এবং পুরো চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা বর্জন করেছি। আমাদের শিক্ষকেরা অতিমাত্রায় চাটুকারিতা করছেন। এজন্যই এবারের আয়োজনের সঙ্গে আমরা নাই।”

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম চঞ্চল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ধরনের বিবৃতির সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সমন্বয় করেই আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রার কাজ করছি।

“যারা বিবৃতি দিয়েছে, তারা বিভ্রান্তি তৈরি করতে চাইছে। তাদের অন্য কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।”

২৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ২০১৭-১৮ সেশন তথা, ২৬তম ব্যাচ (চারুকলা ৭০তম) এর শিক্ষার্থীরা আমাদের পক্ষ থেকে কিছু বিষয় স্পষ্ট করতে চাই। শুরুতেই সবার অবগতির জন্য জানাতে চাই যে, এবারের বৈশাখের আয়োজনের সাথে আমাদের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই।

“মূলত বৈশাখ প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট ব্যাচের তত্ত্বাবধায়নে এবং সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যৌথ প্রয়াসে আয়োজিত হয়ে থাকে। যে আয়োজনের সম্পূর্ণ অর্থ অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।”

চারুকলার রীতি অনুযায়ী যা এ বছর ২৬ ব্যাচের করার কথা। তবে শিক্ষার্থীরা বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন, “এবারের আয়োজন একেবারেই চারুকলা অনুষদের পূর্বাপর রীতির ব্যতিক্রমীভাবে কোনোরকম শিক্ষার্থীদের সম্মতি ও সম্পৃক্ততা ছাড়া শুধুমাত্র শিক্ষকদের সিদ্ধান্তে করা হচ্ছে, যা আমাদের বিশ্বাস ও ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

“এছাড়া এবার একাডেমিকভাবে বৈশাখ আয়োজন করার এই সিদ্ধান্ত অনুষদে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, ছাত্র প্রতিনিধি কারো সাথে কোনোরকম পূর্ব আলোচনা ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট ছাত্র-শিক্ষক গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় খুবই অতর্কিতভাবে নেওয়া হয়েছে।”

চারুকলার ডিন আজহারুল ইসলাম চঞ্চল বলেন, “২৬ ব্যাচ এখন প্রাক্তন, তারা এখন আর রানিং শিক্ষার্থী নন। আর রানিং শিক্ষার্থীরা মঙ্গল শোভাযাত্রার কাজের সঙ্গে আছেন।”

মঙ্গল শোভাযাত্রায় ‘আবু সাঈদের মোটিফ’ বিতর্ক

এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে- ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। জুলাই আন্দোলনে নিহত রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ানোর আদলে একটি মোটিফ করা হবে বলে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ছড়িয়েছে।

এ বিষয়ে চারুকলার ডিন আজহারুল ইসলাম চঞ্চল বলেন, “এটা প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জুলাই আন্দোলনকে কীভাবে বর্ষবরণের উদযাপনে যুক্ত করা যায়, তার প্রেক্ষিতে এটা আলোচনা হয়েছিল। একটা খসড়া সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এখন আমরা আবু সাঈদের মোটিফটি বাদ দিয়েছি। এটি থাকছে না।”

২৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও বিবৃতিতে বলেছেন, “শোভাযাত্রায় বানানো স্ট্রাকচার এর ডিজাইন এবং আইডিয়া সম্পূর্ণ শিক্ষকদের দেওয়া, চারুকলার আপামর সাধারণ শিক্ষার্থী এর সাথে কোনো ভাবেই সংযুক্ত এবং অবগত না।

“শহীদ আবু সাঈদের স্ট্রাকচার সম্পর্কেও আমরা অবগত ছিলাম না এবং কারো ব্যক্তিগত মতাদর্শে আঘাত দেওয়ার পক্ষেও না আমরা। এহেন কুরুচিপূর্ণ ও প্রহসনমূলক সিদ্ধান্ত চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে নেওয়া হয়নি এবং চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তের সাথে ছিল না।

“অতএব এর জন্য অনলাইনে তৈরি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার দায় সমগ্র চারুকলার নয় বরং দায়িত্বে থাকা নির্দিষ্ট কতিপয় আয়োজক এবং ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ওপর বর্তায়।”