বৃহস্পতিবার ০৩ এপ্রিল ২০২৫, চৈত্র ১৯ ১৪৩১, ০৪ শাওয়াল ১৪৪৬

সংস্কৃতি

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া যে মসজিদে শুধুমাত্র ঈদের নামাজ আদায় করা হয়

 প্রকাশিত: ০৯:১৯, ২৬ মার্চ ২০২৫

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া যে মসজিদে শুধুমাত্র ঈদের নামাজ আদায় করা হয়

অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে চলেছে ৪০০ বছরের পুরাতন মোগল আমলের ঐতিহাসিক সুর মসজিদ। জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামে অবস্থিত মসজিদটি এখন কেবল কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে মোগল শাসন আমলে স্থাপিত  ঐতিহাসিক সুর মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে এর মূল অবকাঠামো। মসজিদটি ঘুরে দেখা যায়,এর দৈর্ঘ্য ২২ ফুট ও প্রস্থ ১২ ফুট। ভিতরের প্রস্থ ৮ ফুট। সামনে ৩ টি দরজা, আর পশ্চিম দেয়ালে আছে ৩ টি মেহরাব।

তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির গম্বুজগুলোও জঙ্গলে ঢাকা পড়ে আছে। ছোট ছোট ইট দিয়ে নির্মিত মসজিদের  ভেতরের দেওয়ালে নিপুন হাতে তৈরি বিভিন্ন দৃশ্য খোদাই করা রয়েছে। যা এখনো দৃশ্যমান। মসজিদটির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কোনো কমতি রাখেনি নির্মাণকারীরা। স্থানীয়দের ধারনা এটি মোগল আমলে তৈরি। 

নবাবগঞ্জ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ হাবিব হোসেন জানান, এই  ঐতিহাসিক মসজিদটি এলাকাবাসীর কাছে ‘সুর মসজিদ’ নামে পরিচিত। 

তিনি বলেন, সর্বশেষ কবে এই মসজিদে নামাজ আদায় হয়েছে তা এখন আর কেউ বলতে পারবে না। আমার  জন্মের পর থেকেই মসজিদটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। ঐতিহাসিক মসজিদ হিসেবে এলাকায় ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে। অবহেলা-অযত্নে মসজিদের চারপাশে ঝোপ-জঙ্গলে ঢেকে থাকে। মাঝে মধ্যে এলাকাবাসী ঝোপ-জঙ্গল কেটে নিয়ে যায় বলে এখনো মসজিদটি দৃশ্যমান। 

তিনি বলেন, তবে গত প্রায় ১০ বছর ধরে দুই ঈদে গ্রামের মানুষ এই মসজিদের সামনে ঈদের নামাজ আদায় করেন।  সে উপলক্ষে মসজিদটি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। 

নবাবগঞ্জ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান সালাউদ্দিন মাসুম বলেন, মসজিদটি দীর্ঘকাল আগে নির্মিত হলেও সেখানে নামাজ আদায় হয় না। যুগ যুগ ধরে মসজিদটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বর্তমানে মসজিদ চত্বরে বছরে দু'টি  ঈদের নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে। 

তিনি বলেন, প্রাচীন এই মসজিদটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে বর্তমানে মসজিদের দেওয়ালের বাইরের কারুকার্যসহ মসজিদের ভেতরের দেওয়ালগুলিও নষ্ট হতে চলেছে। 

মসজিদটির সংরক্ষণ ও এখানে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল ইসলামের কাছে আবেদন করেছেন বলে জানান। 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন,এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে মসজিদটি এক রাতেই নির্মিত হয়েছে। স্থানীয় মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি এই মসজিদের বয়স প্রায় ৪'শত বছর হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। 

প্রাচীন এ নিদর্শনটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এলাকাবাসী। তারা মনে করেন, ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি অযত্নে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা জরুরি।   

জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল ইসলাম জানান, মসজিদটির বিষয়ে তিনি  অবগত আছেন। তিনি ইউপি চেয়ারম্যানসহ মসজিদটি পরিদর্শনও করেছেন। মসজিদ সংস্কার ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। বর্তমানে মসজিদের ৮ শতক জমিসহ খাস খতিয়ানে চলতি ভূমি জরিপে রেকর্ড হয়েছে। 

তিনি বলেন, এই মসজিদের প্রায় ৫০ শতকের মতো জমি ছিল। এর মধ্য ২০ শতক জমি ঈদগাহ মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অবশিষ্ট জমি অন্যরা ভোগ দখল করছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মাহমুদপুর ইউনিয়নের তহশীলদারকে বিস্তারিত বিষয় তদন্ত করে অবগত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। 

তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক নিদর্শন বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা ও সংরক্ষণে যা করা প্রয়োজন সে ব্যবস্থা  নেয়া হবে।’