মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, চৈত্র ৪ ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬

ব্রেকিং

১২৮ জনের তালিকা পূর্ণাঙ্গ নয়, আরও তদন্ত হবে: ঢাবি সৌদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রণালয় ওমরাহ ভিসা বন্ধ করেনি: ধর্ম উপদেষ্টা হাসিনা ফেরাউন-নমরুদের মত আচরণ করেছিল: ঢাবিতে মামুনুল হক ওসমান পরিবারের ১২৬ কোটি টাকা ফাঁকির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ বরগুনা ও মাগুরায় ‘ধর্ষণের শিকার’ ২ শিশুর পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ শেখ হাসিনা-জয়-পুতুল-রেহানার আরো ৩১ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ যমুনা রেলসেতুর উদ্বোধন: উত্তরবঙ্গে ট্রেনযাত্রায় সময় বাঁচবে ৩০ মিনিটেরও বেশি যমুনা রেলসেতুতে ট্রেন চললো ১২০ কিলোমিটার গতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি খাদের কিনারা থেকে রিটার্ন করেছে: অর্থ উপদেষ্টা কিশোরীকে ধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা, একজনের মৃত্যুদণ্ড রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রিটের ক্ষেত্রে ইসির গণবিজ্ঞপ্তি স্থগিত গুম তদন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়ল ৩০ জুন পর্যন্ত তাজা ফল আমদানিতে শুল্ক-কর কমাল সরকার গাইবান্ধায় ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ গ্রেপ্তার ৪ অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় ৪১৩ জন নিহত : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাকরি করতে ঢাকা এসে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল কিশোর ওমর ফারুক

সংস্কৃতি

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতার : ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গায় বইরা লইয়া যায়’

 প্রকাশিত: ১২:১৮, ১৮ মার্চ ২০২৫

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতার : ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গায় বইরা লইয়া যায়’

‘বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি’ খ্যাত ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজার। এটি পুরান ঢাকায় অবস্থিত।

এখানকার অধিবাসীদের জন্য ১৬৭৬ সালে মোগল সুবেদার শায়েস্তা খান নির্মাণ করেন ঐতিহ্যবাহী শাহি মসজিদ। পরবর্তীকালে ১৭০২ সালে নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ এই চকবাজারকে রূপান্তর করেন আধুনিক বাজারে। সে থেকে এ বাজার ভরে ওঠে সমঝদার মানুষের মুখরোচক খাবারে। আর ওই সময় থেকেই রমজান মাস এলে এখানকার রোজাদারদের জন্য তৈরি হয় নানা ধরনের বাহারি ইফতারি। বাণিজ্যের জন্য বসতে শুরু করে ভাসমান বাজার। সে ঐতিহ্য আজও বহমান। 

পূর্বের ধারবাহিকতা বজায় রেখে আজও চকবাজারসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে চোখে পড়ে মুখরোচক ইফতারির বাহার, যা হরহামেশাই মন কেড়ে নিচ্ছে রোজাদারসহ সকলের। 

বর্তমানে চকবাজার ছাড়াও পুরান ঢাকার বাংলাবাজার, সদরঘাট,বংশাল,গুলিস্তান, ওয়ারী, লক্ষ্মীবাজার, বাবুবাজার, আরমানিটোলা, সুরিটোলা, কাপ্তানবাজার, চানখাঁর পুল, আজিমপুর, টিপু সুলতান রোড, নারিন্দাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাহারি ইফতারি পাওয়া যায়। পুরান ঢাকার সব পাড়া-মহল্লায় হরেক রকম ইফতার পাওয়া গেলেও চকবাজারের ইফতার স্থানীয় রোজাদারদের জন্য সারাদিন যেন মুখিয়ে থাকা ভোজন বিলাস।

এই ঐতিহ্যবাহী ইফতার ঢাকার ভোজন রসিকদের জন্য আকর্ষণ ও দর্শনীয়ও বটে। 

এসব এলাকায় গেলে হাঁকডাক শোনা যায়, ‘এটা চকবাজারের সেরা, বড় বাপের পোলায় খায় ঠোঙ্গায় বইরা লইয়া যায়’, ‘বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির শাহী সূতি কাবাব’। এমন হাঁক ডাকে বুঝা যায় এটা রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার। যে বিক্রেতা যত আয়োজন করে ডাকতে পারেন, সে দিকে চোখে পড়ে ক্রেতাদের ভীড়। তাই তো বরাবরের মতো এবারও ঐতিহ্যবাহী চকবাজারে ইফতার সামগ্রীর বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে।

ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু খাবারের টানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ ছুটে আসছে এখানে। বহুবছরের পুরোনো এই বাজারে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় করছে তাদের পছন্দের ইফতার কিনতে।

চকবাজারে দুপুরের পরপর দেখা যায় দোকানিরা নানা পদের ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। পুরান ঢাকার বিশেষ খাবার যেমন - কাবাব, মোগলাই পরোটা, হালিম, শাহি জিলাপি, রেজালা, গরুর আচার, মুরগীর আচার, লেগ রোস্ট, বুরহানির মতো খাবারের স্বাদ মানুষকে টেনে নিয়ে আসছে প্রতি রমজানে। চকবাজারে ইফতার বাজার বসে শাহি মসজিদের সামনে রোডের দুই পাশজুড়ে। পুরান ঢাকার স্থানীয়রা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভোজন বিলাসীরা এখানে এসেছেন পছন্দের ইফতার সামগ্রী কিনতে।

গাজীপুর থেকে বন্ধুদের সাথে ইফতার বাজারে এসেছেন জাহিদুর রহমান। তিনি বাসসকে বলেন, ফেসবুকে ইউটিউবে চকবাজারের জনপ্রিয়তা দেখে বন্ধুদের সাথে নিয়ে আসলাম ইফতার কিনতে। অনেকদিন পর সব বন্ধুরা একসাথে হয়েছি। তাই ইফতার পার্টির ইফতার আমরা এখান থেকে কিনলাম। আমরা চিকেন গ্রিল, ডিম চপ, কবুতর রোস্টসহ অন্যান্য খাবার কিনেছি।

বরিশালের লঞ্চের যাত্রী হারুন হাবীব এসেছেন চকবাজারে ইফতার কিনতে। তিনি বাসসকে বলেন, পরিবার নিয়ে বরিশাল যাচ্ছি, ছেলে-মেয়েরা মোবাইলে চকবাজারের ইফতারের ভিডিও দেখে আবদার করেছে তারাও এখানকার ইফতার খাবে। তাই ওদের আবদার পূরণের জন্য যানজটে কষ্ট করেও এখানে থেকে ইফতার কিনলাম।

চকবাজারের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইফতার আইটেম ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ এটি প্রতি কেজি  ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা দাবি করছেন, এতে ৩০টিরও বেশি উপকরণ ব্যবহার করেন এবং এটি ৬৮ বছরের পুরনো ইফতার আইটেম।  যার মধ্যে আছে খাসির মাংস, মুরগির মাংস, বুটি কাবাব, ডিম, আলু, ছোলা, খাঁটি ঘি, স্পেশাল গরম মসলা ইত্যাদি। ‘বড় বাপের পোলায় খায়’-এর বিক্রেতা বলেন, এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার। এখানে মানুষ আসবেই।

এবার প্রতি পিস কিমা পরোটা ১১০ টাকা, টান পরোটা ৮০ টাকা, চিকেন সাসলিক ১১০ টাকা, অ্যারাবিয়ান কাবাব ৮০ টাকা, মুঠি কাবাব ৬০ টাকা, হালিম ৩০০ /৪০০/  ৮০০ টাকা বাটি , বটি কাবাব ১২০ টাকা, দই বড়া ২৫ টাকা, শাহী জিলাপি ৩০০ টাকা, সাধারণ জিলাপি ২০০ টাকা, চিকেন চাপ ১৫০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ১০০ টাকা প্রতি পিচ , খাসির লেগ রোস্ট ৮০০ টাকা এছাড়াও রয়েছে হরেক রকমের শরবত, ছোলা, পেয়াজু, বেগুনি, ফালুদা, আলুর চপসহ নানা রকমের ফল।

ইফতার বিক্রেতা তাওসিফ আহমেদ বাসসকে বলেন, গতবারের তুলনায় আমাদের এবার বিক্রি ভালো। আমরা সব সময় খাবারের গুণগত মান ঠিক রাখার চেষ্টা করি। তাই আমাদের ক্রেতারা বারবার আমাদের কাছে আসেন।

চকবাজারের বেশিরভাগ ইফতার বিক্রেতারা বংশপরম্পরায় এখানে ব্যবসা করছেন । কারও ব্যবসা এখন তৃতীয় প্রজন্ম কারও ব্যবসা চতুর্থ প্রজন্মের বংশধররা পরিচালনা করছেন। কিছু কিছু বিক্রেতা আবার মৌসুমী ব্যবসায়ী। তারা শুধু রোজার মাসে এখানে ইফতারের দোকানগুলো পরিচালনা করেন।