মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, চৈত্র ৪ ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬

ব্রেকিং

গুম তদন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়ল ৩০ জুন পর্যন্ত চাঁদপুরে যুবককে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা আন্দোলনে হামলা: জাবির ২৮৯ জনকে বহিষ্কার, ৯ শিক্ষক বরখাস্ত তাজা ফল আমদানিতে শুল্ক-কর কমাল সরকার গাইবান্ধায় ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ গ্রেপ্তার যশোরে বাড়ির সামনে যুবককে গুলি করে হত্যা ৪ অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে যুদ্ধবিরতি বাড়ার আশা ভেস্তে দিয়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত ২৩২ ভূমি ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে হবে ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাল সরকার বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ মার্কিন উদ্বেগের ‘বড় জায়গা’: তুলসী গ্যাবার্ড চাকরি করতে ঢাকা এসে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল কিশোর ওমর ফারুক

সংস্কৃতি

মুঘল ঐতিহ্যের নান্দনিক স্থাপত্য নিদর্শন শরীফপুর শাহী জামে মসজিদ

 প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ১৮ মার্চ ২০২৫

মুঘল ঐতিহ্যের নান্দনিক স্থাপত্য নিদর্শন শরীফপুর শাহী জামে মসজিদ

মুঘল ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর শাহী জামে মসজিদ। অসাধারণ নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীর অনন্য নিদর্শন মসজিদটি সবার নজর কাড়ে। আধুনিকতার ছোঁয়া না লাগলেও প্রাচীন এই মসজিদটিতে মুসল্লির অংশগ্রহণ কমেনি, বরং মসজিদটিতে নামাজ পরে স্বস্তি পান বলে জানান স্থানীয় মুসল্লিরা। মসজিদের পাশে বিশাল নাটেশ্বর রাজার দিঘি। দিঘির পাড়ে আছে এক ধর্মগুরুর মাজার। দিঘির শান্ত জলরাশির পাশে মসজিদের নান্দনিক সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। প্রতিদিনই দূর-দূরান্তের মানুষ এখানে ভিড় করেন।

কুমিল্লা জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামের এই মসজিদটি তিন জেলার মিলনস্থলে অবস্থিত। উত্তর-পশ্চিমে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে কিছু দূর এগোলেই নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা। মসজিদের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে নাটেশ্বর দিঘি। ৩৫ দশমিক ২৯ একর আয়তনের সুবিশাল দিঘির পাড়ে পূর্ব-উত্তর কোণে মসজিদের অবস্থান।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৭০৬-১৭০৭ সালের মধ্যে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। তিনশ’ বছরেরও বেশি সময় আগে নির্মাণ করা হলেও মসজিদটির সৌন্দর্য এখনো অটুট। মসজিদটির বাইরের দৈর্ঘ্য ১৪ দশমিক ৪৮ মিটার ও প্রস্থ ৫ দশমিক ৯৪ মিটার। মসজিদের ওপরে তিনটি গম্বুজ আছে। আয়তাকার মসজিদটির পূর্ব দিকে তিনটি খিলানযুক্ত দরজা। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় দরজাটি অপেক্ষাকৃত বড়। দরজাগুলোর বিপরীত দিকে পশ্চিমে তিনটি মেহরাব আছে। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি অন্য মেহরাব দুটির তুলনায় বড়। মসজিদের চার কোনে চারটি বড় অষ্টভুজাকার মিনার আছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের ওপরে দুটি অষ্টভুজাকার মিনার আছে। কেন্দ্রীয় গম্বুজটি অপেক্ষাকৃত বড়। গম্বুজের ভেতরের অংশ পাতার নকশা। বাইরের অংশে চক্র নকশার কাজ। 

মসজিদের সামনের দেয়ালে ফারসি ভাষার শিলালিপিতে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হায়াতে আবদুল করিমের নাম লেখা। এলাকাবাসীর কাছে তাঁর পরিচয় নিয়ে দুই ধরনের মত প্রচলিত। একটি হলো, হায়াতে করিম দিঘি খননকারী নাটেশ্বর রাজার কর্মকর্তা ছিলেন। অন্যটি হলো, তিনি দিঘির পাড়ে থাকা মাজারের ধর্মগুরুর মুরিদ ছিলেন।

স্থানীয় মুসল্লি আবাদ মিয়া বলেন, এ মসজিদে মানুষের ভিড় থাকে সবসময়। এখানে নামাজ পড়া ও দিঘির পূর্ব পাড়ে হজরত সৈয়দ শাহ শরিফ বাগদাদি নামের এক ধর্মগুরুর মাজার আছে সেটি দেখতে আসেন সবাই। ফলে মসজিদ, দিঘি ও মাজার ঘিরে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে।

রফিকুল ইসলাম বলেন, মসজিদের পাশে বিশাল দিঘি। এখানে এসে দিঘির শান্ত পরিবেশে প্রাচীন মসজিদে নামাজ পড়ে মনটাই শান্ত হয়ে যায়। মানসিক শান্তি পাই। মাঝে মধ্যে আসি, মন ভাল হয়ে যায়।

এলাকাবাসী জানায়, মসজিদটি পুরাতন হলেও এলাকার বেশির ভাগ মুসল্লি এখানে নামাজ পড়তে আসেন।  শুধু এলাকার মানুষই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মসজিদটিকে দেখতে ও নামাজ পড়তে আসেন অনেকেই। মাজার ভক্তদের বিশ্বাস মসজিদের পাশের দিঘিতে গোসল করলে মনের আশা পূরণ হয়। এছাড়াও মসজিদটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে মাদরাসা যেখানে তালিম নেয় স্থানীয় শিশুরা।

শরীফপুর শাহী জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ সামছুদ্দোহা বলেন, প্রতিদিনই অনেকে মসজিদটি দেখতে আসেন। বিশেষ করে শুক্রবার অনেক দূরের মানুষও এখানে নামাজ পড়তে আসেন। আমরা চেষ্টা করি মসজিদের সৌন্দর্য যেন নষ্ট না হয়।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি মোতাহার হোসেন চৌধুরী বলেন, মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের। অধিদপ্তর ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতনসহ সার্বিক বিষয় দেখাশোনা করেন। ছয় বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদে  সংস্কার করেছিল। বর্তমানে মসজিদের সৌন্দর্য রক্ষায় জরুরি কিছু সংস্কার দরকার। কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিষেধ থাকায় তারা নিজস্ব উদ্যোগে কিছু করছেন না। তবে সংস্কারের বিষয়টি আমরা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে জানয়েছি। 

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোঃ আবু সাইদ ইনাম তানভিরুল জানান, শরীফপুর শাহী জামে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত আছে। আমরা অতি শীঘ্রই প্রকৌশলীসহ মসজিদটি পরিদর্শন করবো, মসজিদের কিছু সংস্কার দরকার। আমরা আশা করি বরাদ্দ আসলেই মসজিদটি সংস্কার করা হবে।
ইতিহাসবিদ আহসানুল কবির বলেন, মসজিদটি ইসলাম ধর্মের সোনালী অধ্যায় এর স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়াও স্থাপনাটি কুমিল্লার দৃষ্টি নন্দন স্থাপনার মধ্যে অন্যতম। কুমিল্লা জেলার এই প্রত্নাত্ত্বিক সম্পদ সারা দেশজুড়ে পরিচিত ও সমাদৃত হবে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।