রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, চৈত্র ২ ১৪৩১, ১৬ রমজান ১৪৪৬

ব্রেকিং

ছয় ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মুক্ত প্রাণ গোপালের মেয়ে আনন্দ করার মেজাজে নাই, স্বাধীনতা দিবসে কুচকাওয়াজ হচ্ছে না: স্বরাষ্ট্রসচিব ২০ রমজানের মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধের আহ্বান শ্রমিক নেতাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ১২৭ পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ভবিষ্যতে কোনো বাবা-মায়ের বুক যেন এভাবে আর খালি না হয়: আবরার ফাহাদের বাবা আবরার হত্যা: ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন হাই কোর্টে বহাল সাত কলেজ নিয়ে গঠিত হচ্ছে " ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি " চট্টগ্রামে ভিক্ষুককে ‘ধর্ষণের’ অভিযোগে অটোরিকশা চালক গ্রেপ্তার রাঙামাটিতে ইউপিডিএফের কালেক্টরকে গুলি করে হত্যা জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকা ত্যাগ ফরিদপুরে তিন বাহনের সংঘর্ষে নিহত ২ খুলনায় একাধিক হত্যা মামলার আসামি গুলিতে নিহত জামালপুরে মাদ্রাসার ২ ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগ, আটক শিক্ষক নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চার শিক্ষার্থীর ‘গ্যাংআপ’ চট্টগ্রামে পুলিশকে গুলি করে পালানো ‘ছোট সাজ্জাদ’ ঢাকায় গ্রেপ্তার দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপির কর্মী নিহত গণমাধ্যমকর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ ট্রাম্পের ইয়েমেনে হুতিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা মাকে নিয়ে আর গ্রামে ফেরা হলো না শহীদ জামাল উদ্দিনের

সংস্কৃতি

প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে জামালপুর জামে মসজিদ

 প্রকাশিত: ১৩:৩৬, ১৬ মার্চ ২০২৫

প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে জামালপুর জামে মসজিদ

ঠাকুরগাঁও  জেলার ঐতিহ্যবাহী জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ জেলার ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন হিসেবে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।  এটি এখন বাংলাদেশ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত। জেলা শহরের বিমানবন্দর পেরিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে মসজিদটি অবস্থিত। 

স্থানীয়দের কাছে এটি জামালপুর জামে মসজিদ বা জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ নামে পরিচিত। 

মসজিদের প্রবেশমুখেই আছে বেশ বড় ও সুন্দর একটি তোরণ। মসজিদের ওপরে বড় বড় তিনটি গম্বুজ। 

গম্বুজের ওপরের অংশে কাঁচ ও পাথরের কারুকাজ করা। মসজিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য এর নকশা করা মিনার। 

মসজিদের ছাদে মোট ২৮টি মিনার আছে। নকশা ও কারুকাজ করা প্রত্যেকটি মিনারের উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট। একসঙ্গে এতো মিনার বিশিষ্ট মসজিদের দেখা পাওয়া বিরল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মসজিদটি চার অংশে ভাগ করা। মূল কক্ষ, মূল কক্ষের সঙ্গে ছাদসহ বারান্দা, ছাদবিহীন বারান্দা, অর্ধপ্রাচীরে বেষ্টিত ছাদবিহীন বারান্দার মাঝখানে মূল দরজা। মূল কক্ষের কোণগুলো তিন থাম বিশিষ্ট। পুরো মসজিদের ভেতর ও বাইরের দেওয়ালগুলোতে প্রচুর লতাপাতা ও ফুলের নকশা আছে। একসঙ্গে এ মসজিদে ৩০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন।

জায়গাটির নাম এক সময় বসন্তনগর ছিল। ১৮৮৫ সালে সে নাম পরিবর্তন করে জামালপুর রাখা হয়। বর্তমানে এটি জামালপুর এস্টেট নামে পরিচিত।

মসজিদটি নির্মাণ করেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে ব্যবসার উদ্দেশ্যে আসা এক চৌধুরী পরিবার। 

চৌধুরী পরিবার সূত্রে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন উত্তর দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট মহকুমার রায়গঞ্জ থানার বারো পরগনা তাজপুর গ্রামে পীর বংশে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল হালিম। ১৭৬৫ সালের দিকে আব্দুল হালিম কাপড়ের ব্যবসার জন্য তাজপুর থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের জামালপুরে (তৎকালীন বসন্তনগর) এসে বসতি স্থাপন করেন।

ওই সময় তিনি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের তৎকালীন জমিদার লালা মুক্তি প্রসাদ নন্দের কাছে এক হাজার বিঘা জমি কিনে নিজের জমিদারি শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি মোট ২৬ হাজার একর জমি কিনেছিলেন। 

জমিগুলো ৩ জেলার ৮ থানাজুড়ে বিস্তৃত। থানাগুলো হলো আটোয়ারি, বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর, রায়গঞ্জ, রাণীশংকৈল, পীরগঞ্জ, বীরগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও। ১৭৭০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া প্রশাসন তাকে চৌধুরী উপাধি দেয়। লোকজনের কাছে তিনি ব্রিটিশ চৌধুরী নামে খ্যাতি পান।

জানা গেছে, আব্দুল হালিম চৌধুরী ১৭৭০ সালে রাজ প্রাসাদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। রাজ প্রাসাদের দ্বিতীয় তলার নির্মাণ কাজের সময় ১৭৮০ সালের ভারতের উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ থেকে মিস্ত্রি এনে এ মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

আব্দুল হালিম চৌধুরীর মৃত্যুর পর জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন রওশন আলী চৌধুরী। রওশন আলী চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার ছেলে জামাল উদ্দীন চৌধুরী জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং মসজিদ নির্মাণ কাজ চালু রাখেন। জামাল উদ্দীন চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার ছেলে নুনু মোহাম্মদ চৌধুরী ১৮০১ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। মসজিদটি নির্মাণ করতে চার পুরুষের প্রায় ২১ বছর সময় লাগে। মসজিদ নির্মাণের প্রধান দুই মিস্ত্রি হংস রাজ ও রামহিৎ হিন্দু ধর্মের অনুসারী ছিলেন। মসজিদের নির্মাণ কাজ ব্যয়বহুল ছিল। তাই মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষে হলেও জমিদার বাড়ির নির্মাণ অসমাপ্ত থেকে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা মেরাজুল হোসেন  বলেন, মসজিদটি অনেক প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী। এ মসজিদ ও মসজিদের সঙ্গে জাদুঘরে সংরক্ষিত জমিদারদের পুরোনো সংগ্রহশালা দেখতে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সংস্কারের উদ্যোগ নিলে দীর্ঘ সময় মসজিদটির সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব।  

মসজিদটিকে স্বীকৃতির মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক হেরিটেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জমিদার পরিবারের বর্তমান বংশধররা।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা  বলেন, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কালের সাক্ষী জমিদার বাড়ি মসজিদটি। স্থাপত্য শিল্পের এ এক অনন্য নিদর্শন। মসজিদটিকে আন্তর্জাতিক হেরিটেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কাজ চলমান রয়েছে। মসজিদের উন্নয়ন ও ঐতিহ্য রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।