রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, বৈশাখ ১৪ ১৪৩২, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

ব্রেকিং

ঐকমত্যের বাইরে সংস্কারের প্রয়োজন নেই: আমির খসরু এপ্রিলের ২৬ দিনে প্রবাসী আয় ২২৭ কোটি ডলার দুই উপদেষ্টার সাবেক এপিএস ও পিওর পেছনে দুদক মামলার ‘হয়রানি’: বিএনপিকর্মীদের জন্য ক্ষতিপূরণ চান আমীর খসরু বটগাছ প্রতীক চায় খেলাফত আন্দোলনের জাফর গ্রুপ আইন উপদেষ্টার বাসায় পড়ে থাকা ড্রোনে ধ্বংসাত্মক ডিভাইস পাওয়া যায়নি রোম ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজারের সাবেক এমপি জাফর আলম ঢাকায় গ্রেপ্তার আগামী নির্বাচনে অনেক সারপ্রাইজ দেখতে পাব: সামান্তা শারমিন কবি দাউদ হায়দারের নির্বাসিত জীবনের চিরমুক্তি পটুয়াখালীতে ধর্ষণের শিকার সেই শহীদকন্যার আত্মহত্যা ঢাকার বাতাস আজ ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ সুনামগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনার জেরে যুবক খুন দুই পুত্রবধূসহ এপ্রিলেই দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া অন্তিম শয়ানে পোপ ফ্রান্সিস প্রতিরক্ষা অভিযানের খবর সরাসরি প্রচারে নিষেধাজ্ঞা ভারতের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৫৬ ফিলিস্তিনি নিহত

জাতীয়

কবি দাউদ হায়দারের নির্বাসিত জীবনের চিরমুক্তি

 প্রকাশিত: ১০:৫০, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

কবি দাউদ হায়দারের নির্বাসিত জীবনের চিরমুক্তি

‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’- পংক্তিমালা এসেছিল যার কলম হয়ে, সেই নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার চলে গেলেন জীবনের সীমানা ছাড়িয়ে।

শনিবার রাতে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের একটি বয়স্ক নিরাময় কেন্দ্রে মৃত্যু হয় ৭৩ বছর বয়সী এই কবির।

তার ভাতিজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাওন্তী হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্থানীয় সময়ে রাত ৯টা ২০ মিনিটে মারা গেছেন চাচা। বিস্তারিত পরে আমরা জানাতে পারব।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক আরিফ হায়দার বলেন, তার ভাই দাউদ হায়দার জার্মান সরকারের ব্যবস্থাপনায় থাকায় তার শেষকাজ সেখানকার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হতে পারে।

“বাঙালি কমিউনিটি চাইলে তাদের ব্যবস্থাপনাতেও হতে পারে।”

১৯৭৪ সালে দেশ ছাড়ার পর কয়েকবছর কলকাতায় কাটিয়ে ১৯৮৭ সালে সেখান থেকে জার্মানিতে চলে যান দাউদ হায়দার। এরপর থেকে সেখানেই ছিলেন তিনি।

চিরকুমার দাউদ হায়দার আগে থেকেই নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। গতবছর ডিসেম্বরে বার্লিনের বাসার সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে তিনি মাথায় আঘাত পান। সে সময় তাকে হাসপাতালের আইসিইউতেও নিতে হয়।

এরপর হাসপাতাল ছাড়লেও আর সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেননি দাউদ হায়দার।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পাবনায় দাউদ হায়দারের জন্ম। তিনি একাধারে কবি, লেখক এবং সাংবাদিক।

১৯৭৪ এর ২৪ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় তার কবিতা ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’ প্রকাশিত হলে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের’ অভিযোগে তার বিরূদ্ধে মামলা হয়। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে ১১ মার্চ তাকে আটক করে পুলিশ।

২০ মে মুক্তি দেওয়া হলেও কবিকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি তখনকার সরকার। পরদিন সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তাকে একপ্রকার খালি হাতে কলকাতায় পাঠানো হয়।

কবি লিখেছিলেন, সে সময় তার কাছে ছিল মাত্র ৬০ পয়সা, কাঁধে ঝোলানো একটি ব্যাগে ছিল কবিতার বই, দুজোড়া শার্ট, প্যান্ট, স্লিপার আর টুথব্রাশ।

“আমার কোনো উপায় ছিল না। মৌলবাদীরা আমাকে মেরেই ফেলত। সরকারও হয়ত আমার মৃত্যু কামনা করছিল,” লিখেছিলেন দাউদ হায়দার।

আরিফ হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কবি দাউদ হায়দার ১-২ বছরের নিয়মিত বিরতিতে কলকাতায় আসতেন।

“সেখানে ভাই-বোনরা মিলে যেতাম, সবার দেখা হতো।”

সবশেষ ২০২৪ সালে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণত কলকাতা বইমেলায় উনি আসতেন।

“মাসখানেকের মতো সময়ের জন্য আসতেন। উনি জার্মানিতে একাই থাকতেন।”

দাউদ হায়দারের ভাইদের মধ্যে প্রয়াত হয়েছেন নাট্যকার জিয়া হায়দার, কথাশিল্পী রশীদ হায়দার ও কবি মাকিদ হায়দার। অন্যদের মধ্যে রয়েছেন জাহিদ হায়দার, আবিদ হায়দার ও আরিফ হায়দার। তারা প্রত্যেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত।

কবি দেশান্তরী হওয়ার গভীর বেদনার কথা লিখেছেন ‘তোমার কথা’ কবিতায়। ১৯৮৩ সালে কলকাতায় অবস্থানকালে দাউদ হায়দারের কলমে উঠে এসেছে-

 

...মাঝে মাঝে মনে হয়

অসীম শূন্যের ভেতর উড়ে যাই।

মেঘের মতন ভেসে ভেসে, একবার

বাংলাদেশে ঘুরে আসি।

মনে হয়, মনুমেন্টের চূড়ায় উঠে

চিৎকার ক’রে

আকাশ ফাটিয়ে বলি;

দেখো, সীমান্তে ওইপাশে আমার ঘর

এইখানে আমি একা, ভীনদেশী।