১৫ মাসে যুক্ত হয়েছে ১২৮ নতুন গার্মেন্টস কারখানা

১৫ মাসে চালু ১২৮ কারখানা, তৈরি হবে হাজারো কর্মসংস্থান
দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট, ছাত্র আন্দোলন, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগের ধারা থেমে থাকেনি। একদিকে যেমন নতুন নতুন কারখানা চালু হচ্ছে, অন্যদিকে কিছু পুরোনো কারখানা বন্ধও হয়ে যাচ্ছে। তবুও তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে মোট প্রবৃদ্ধি বজায় আছে।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে নতুন সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে ১২৮টি পোশাক কারখানা। এগুলোর সব কটি পুরোদমে চালু হলে প্রায় ৭৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি পুরোনো অনেক কারখানাও উৎপাদন বাড়াতে বিনিয়োগ করেছে।
এই সময়ের মধ্যে সদস্যভুক্ত ১১৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে চাকরি হারিয়েছেন ৯৬ হাজারের বেশি শ্রমিক। শুধুমাত্র গত বছরের আগস্টের পরই ৬৯টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে কর্মহীন হয়েছেন প্রায় ৭৬ হাজার শ্রমিক।
তবে এই ওঠানামার মধ্যেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উল্লম্ফন দেখা গেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ২৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৮৪ শতাংশ বেশি।
নতুন সদস্য হওয়া উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারখানার মধ্যে রয়েছে একেএইচ আউটওয়্যার, এ জেড কম্পোজিট, নেক্সটন, এলএসএ অ্যাপারেলস, সিটেক ফ্যাশন, সুপ্রিম আউটফিট ও স্প্যারো গ্রিনটেক। ১২৮টি নতুন কারখানার মধ্যে ১৮টি কারখানায় এক হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করবেন।
উদাহরণ হিসেবে, গাজীপুরে অবস্থিত এ জেড কম্পোজিট বর্তমানে ১৫০ জন শ্রমিক নিয়ে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে আছে। ঈদের পর পুরোদমে চালু হলে আরও ৭০০–৮০০ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, যেটি ১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করে, গত সেপ্টেম্বরে গাজীপুরে চালু করেছে নতুন কারখানা স্প্যারো গ্রিনটেক, যেখানে বর্তমানে ১ হাজার ৮০০ শ্রমিক কাজ করছেন। গ্রুপটির মোট কর্মসংখ্যা এখন ১৮ হাজার। গত বছর তারা ৩০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।
তবে নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি অনিশ্চয়তাও রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে কিছুটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে অর্ডারে।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানান, অনেক বড় ও মাঝারি কারখানা আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহারে আগ্রহী। তবে ছোট কারখানাগুলো ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে।
এদিকে, বেক্সিমকো গ্রুপের ২৪টি, কেয়া গ্রুপের ৪টি, টিএনজেডের ৪টি এবং আরও কয়েকটি কারখানা এই সময়ে বন্ধ হয়েছে। বেক্সিমকোর বন্ধ হওয়া ২৪টির মধ্যে ১৪টি বন্ধ করা হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। এইসব কারখানায় প্রায় ৩৩ হাজার কর্মী ছিলেন। তাঁদের পাওনা পরিশোধে সরকার ৫২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়, যদিও অনেক শ্রমিক এখনো পুরো পাওনা বুঝে পাননি।
বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, নতুন কারখানা খোলা ও পুরোনো কারখানা বন্ধ হওয়া চলমান প্রক্রিয়া। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির পর বিনিয়োগে আরও গতি আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।