বাংলাদেশ–পাকিস্তান সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের প্রথম ধাপে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক

পুনরুজ্জীবনের পথে ঢাকা-ইসলামাবাদ, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত
প্রায় ১৫ বছর পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। বৃহস্পতিবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের স্থবির সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বৈঠক এমন সময়ে হলো, যখন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ঢাকায় আসছেন আগামী ২৭ এপ্রিল। বিশ্লেষকদের মতে, এই পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের আলোচনা ছিল ভবিষ্যতের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রথম পদক্ষেপ। বৈঠকে উভয়পক্ষ ব্যবসা, বিনিয়োগ, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়।
বাংলাদেশের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। বৈঠক শেষে উভয়পক্ষ পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়।
অমীমাংসিত ইস্যুগুলোতে ভিন্নমত
যদিও অনেক বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একমত হয়েছে, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক বিষয়ে মতপার্থক্য থেকেই গেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভাজিত সম্পদের ন্যায্য হিস্যার দাবি তোলা হলেও পাকিস্তানের বিবৃতিতে এসব বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, "সম্পর্ককে টেকসই করতে হলে এই অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। পাকিস্তান আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে।" তবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল জানায়, পাকিস্তান বিজ্ঞপ্তিতে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত না করার নীতি অনুসরণ করেছে।
ইতিহাস থেকে পুনরাবৃত্তি
এ ধরনের ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। ২০১০ সালের ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকেও পাকিস্তান তাদের বিবৃতিতে একইভাবে এসব বিষয় এড়িয়ে যায়, যদিও বাংলাদেশ পক্ষ এসব দাবির কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিল।
রাজনৈতিক সমাধানের প্রত্যাশা
সাবেক কূটনীতিক ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবীর বলেন, "ঐতিহাসিক ইস্যুগুলোর সমাধান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা হলে বাংলাদেশ জবাব আশা করতে পারে। যেহেতু বাংলাদেশের দাবিগুলো যৌক্তিক, একসময় পাকিস্তান তা মানতে বাধ্য হবে।"
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, '১৫ বছর পর শীর্ষ কূটনীতিকের সফর ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের বরফ গলিয়েছে।' বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে চলা সম্পর্কের 'শীতল যুদ্ধ' যোগাযোগ ও বাণিজ্যের পথ রুদ্ধ করেছিল। তবে এখন দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিকেরা অভিন্ন ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার নতুন পথ খুঁজে পেয়েছেন।