বিদেশগামী শ্রমিকদের বেশিরভাগ সমস্যার সূত্রপাত দেশেই: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন

প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যার মূল উৎপত্তি অনেকাংশেই দেশের মাটি থেকেই—এমন মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
শুক্রবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে 'ফরেন সার্ভিস দিবস' উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা যেসব কর্মী বিদেশে পাঠাই, তাদের ৮০ শতাংশ সমস্যা আমরা ঢাকা থেকেই তৈরি করে পাঠাই। ২০ শতাংশ সমস্যা হয় যাওয়ার পর। কিন্তু সবকিছুর সমাধানের দায়িত্ব গিয়ে পড়ে আমাদের বিদেশি মিশনগুলোর ওপর।”
তিনি বলেন, “ধরুন আমার সৌদি আরবে ৫০ জন কর্মী রয়েছে। তারা কীভাবে ১০ লাখ সমস্যার সমাধান করবে? তাই, সমস্যাগুলো যেন সেখানে পৌঁছানোর আগেই কম হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে এখান থেকেই।”
অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, “যে ব্যক্তি দূতাবাসে সহায়তা চাইতে আসে, সে কিন্তু শখ করে আসে না। বেশিরভাগই চরম দুরবস্থার মুখে পড়ে আসে। আমাদের কূটনীতিকদের উচিত, সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা করা।”
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এবং বিদেশি মিশনে লোকবল সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, “প্রবাসীর সংখ্যা ২০ লাখ থেকে এক কোটিতে পৌঁছেছে, অথচ আমাদের মিশনগুলোর লোকবল কতটুকু বেড়েছে?”
অনুষ্ঠানে ফরেন সার্ভিস দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন তৌহিদ হোসেন। ১৯৭১ সালের এই দিনে কলকাতায় তৎকালীন উপ হাই কমিশনার এম হোসেন আলীর নেতৃত্বে ৬৫ জন বাঙালি কূটনীতিক পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব ত্যাগ করে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এভাবেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম দূতাবাসের যাত্রা শুরু হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের কূটনৈতিক ফ্রন্ট গড়ে ওঠে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত তৌহিদ হোসেন বলেন, “একাত্তরের ১৮ এপ্রিল কূটনীতিকদের সেই বিদ্রোহ মুক্তিযুদ্ধে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছিল। তাদের আনুগত্য ও সাহসিকতা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।”
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বলেন, “বর্তমানে আমরা একটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের কূটনৈতিক দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির এবং ফরেন সার্ভিস একাডেমির মহাপরিচালক ইকবাল আহমেদ।