পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশীদ গ্রেপ্তার: মামলার পেছনে রহস্য

পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশীদ
পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশীদ, যিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন, জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় রামপুরা থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে এই গ্রেপ্তার ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে। আদালতের তথ্য অনুযায়ী, হারুনের বিরুদ্ধে তদন্তে কোনো কার্যকর তথ্য পাওয়া যায়নি, তবুও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর পেছনে তার বিরুদ্ধে গঠিত পুরনো বিরোধ এবং চক্রান্তের সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি করছেন তার পরিবার ও বন্ধুরা।
হারুন অর রশীদ, যিনি স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে পরিচিত, এর আগে একাধিক সময় পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। ২০১২ সালে, প্রতিষ্ঠানের সাড়ে আট বিঘা জমি নিয়ে আবাসন নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার পর তাকে গুম করা হয়েছিল। তখন থেকেই বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের চক্রান্তে লিপ্ত ছিল, যা এখন নতুন করে সামনে এসেছে।
হতাশাজনকভাবে, এই ঘটনায় হারুনকে এমন একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে, যেখানে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন না বলে তার পরিবার দাবি করছে। যেমন, তার বিরুদ্ধে রামপুরা থানার মামলায় আসামী করা হলেও মামলার বাদী তাকে চেনেন না। মামলায় হারুনকে 'আওয়ামী লীগ নেতা' হিসেবে উল্লেখ করা হলেও, তার রাজনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তার বন্ধু ও পরিচিতদের দাবি, হারুন কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
২০১২ সালে এতিমখানার সম্পত্তি রক্ষার জন্য হারুন যে আন্দোলন করেছিলেন, সেটি তার বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ষড়যন্ত্রের জন্ম দেয়। তিনি সেই সময় আওয়ামী লীগের স্থানীয় কিছু নেতার রোষানলে পড়েছিলেন। ২০১৩ সালে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সহায়তায় এক আবাসন প্রতিষ্ঠান এতিমখানার সম্পত্তি ব্যবহার করে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের চেষ্টা করেছিল, যা হারুনের প্রতিবাদের মুখে থমকে যায়। এই ধরনের প্রতিবাদী মনোভাবের কারণে, হারুনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা এবং গ্রেপ্তারির ঘটনা ঘটে।
বর্তমানে, পিবিআইয়ের (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, হারুন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কি না, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে, তদন্তের সূত্র বলছে, মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা নিয়মিত তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে মেলেনি। এর পেছনে হারুনের বিরুদ্ধে একাধিক পুরোনো মামলার মধ্য দিয়ে একটি চক্রের ষড়যন্ত্রও রয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
এছাড়াও, হারুনের বন্ধু বাকী বিল্লাহ দাবি করছেন, বর্তমান পরিস্থিতি হারুনের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ। তার ভাষ্য, "এটি শুধু একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফলস্বরূপ, যেখানে হারুনকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।"
এদিকে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তারাও জানান, হারুনের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে, তার বিরুদ্ধে গঠিত মামলার বিভিন্ন দিক প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে, যেখানে তিনি রাজনৈতিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে কোনো যোগসূত্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি।
হারুনের ঘনিষ্ঠদের মতে, পুরোনো বিরোধের জেরে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং তাকে নতুন করে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। ঢালাওভাবে আসামি করা হওয়ার কারণেই তার পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক এবং প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।