ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এমএলএম কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ গ্রাহকদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিয়ানশি নামে একটি এমএলএম কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সংবাদ সম্মেল
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহানসহ আরও কয়েকজন সাধারণ মানুষ তিয়ানশি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তারা চাকরি, ব্যবসা, উদ্যোক্তা তৈরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে টাকা এবং স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন। সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে ‘সর্বস্তরের জনগণ’-এর ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তুলে ধরেন নুসরাত জাহান ও আরও পাঁচজন ভুক্তভোগী।
নুসরাত জানান, একটি পুরোনো বন্ধুর মাধ্যমে তাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তিয়ানশি কোম্পানির একটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) সিস্টেমে যুক্ত করা হয়। সেখানে দুই দিনের প্রশিক্ষণ শেষে, স্বাবলম্বী হওয়ার প্রলোভনে পড়ে নিজের মায়ের দুই ভরি স্বর্ণালংকার ওই কোম্পানির লোকদের কাছে দিয়ে দেন। কোম্পানির লোকজন ওই স্বর্ণের মূল্য দুই লাখ টাকা নির্ধারণ করে, যা কোম্পানিতে বিনিয়োগ দেখানো হয়। কিন্তু বিনিময়ে কোনো টাকা পাননি নুসরাত, বরং তার কাছ থেকে নকল পণ্য সরবরাহ করা হয়।
নুসরাত জানান, পরবর্তীতে তিনি বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন এবং স্বর্ণালংকার ফেরত চাইলে কোম্পানির লোকজন তাকে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তিনি জানান, "আমি দুই ভরি স্বর্ণ ফেরত চাই।"
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় 'হেল্প লাইন কমিউনিটি বাংলাদেশ'-এর প্রতিষ্ঠাতা বায়েজিত আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চীনা কোম্পানি তিয়ানশি ও তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় কিছু ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটর চাকরি, ব্যবসা, উদ্যোক্তা তৈরি, বিভিন্ন স্কিলের প্রশিক্ষণ, বিনা খরচে বিদেশ ভ্রমণসহ অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা এবং স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করেছেন। শহর, গ্রাম ও স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছে। কলেজের মেয়েদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে তিয়ানশির মাধ্যমে আয় করে বিনা মূল্যে দেশ-বিদেশে যাওয়ার প্রলোভন দেখান। কুমিল্লায় নিয়ে তিন দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে ‘ব্রেন ওয়াশ’ করানো হয়। পরে শিক্ষার্থীদের টাকা দিয়ে ‘পণ্য কিনে বিনিয়োগ’ করতে বলে। টাকা না থাকলে পরিবার থেকে স্বর্ণালংকার চুরি করতে উদ্বুদ্ধ করেন। টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়ে কিছু পণ্য দিয়ে পরে আর যোগাযোগ রাখেন না তাঁরা। প্রতিবাদ করলে উল্টো বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের হুমকি দেন।
বায়েজিত আহমেদ আরও বলেন, টাকার বিনিময়ে তিয়ানশির ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটররা বিভিন্ন পণ্য দিয়ে থাকেন। ৩৫ টাকা দামের মাথাব্যথা কমানোর যন্ত্র, বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে জানিয়ে ১৩ হাজার টাকা মূল্যের ব্রেসলেট, সাড়ে চার হাজার টাকার ডায়াবেটিকসের ওষুধ, সাড়ে তিন হাজার টাকা দামের টি প্যাক, দুই হাজার টাকা দামের ক্যালসিয়াম জিংকের পাউডার, তিন হাজার টাকা দামের গ্যাসট্রিকের ওষুধ, বয়সের ছাপ কমানোর তিন হাজার টাকা দামের ওষুধ ইত্যাদি।
তিয়ানশি কোম্পানির ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিস্ট্রিবিউটর শরীফুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "তাদের (অভিযোগকারী গ্রাহক) সঙ্গে আলোচনা করেছি, তবে তারা কোন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি।" তিনি আরও জানান, কিছু ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করলেও, সালিসি সভায় উপস্থিত হননি এবং অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
অন্যদিকে, আরও কিছু শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। সাফা নামে একজন ভুক্তভোগী বলেন, তারা তাকে ২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে বলেছিল, যার পর লভ্যাংশের প্রলোভন দেখানো হয়। কিন্তু পরে সে টাকা এবং পণ্য ফেরত পায়নি। অন্য এক ভুক্তভোগী শেখ শাহরিয়ার জানান, তিনি ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, কিন্তু এখনও তার পাওনা টাকা ফেরত পাননি।
শাহরিয়ার সেজান, রাফসান রিফাত ও মো. নাঈম নামের আরও ভুক্তভোগী তাঁদের প্রতারিত হওয়ার কথা জানান। তাঁরা বলেন, তিয়ানশির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিস্ট্রিবিউটর শরীফুল ইসলাম, সুবর্ণা আক্তার, আশরাফুল ইসলাম মেহেদী, ইকবাল হোসেনসহ ১৮ থেকে ২০ জনের নামে তাঁরা অভিযোগ করেন। উল্টো প্রতারকেরা ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন বলে তাঁরা জানান।