ছুটি শেষে ব্যস্ত কমলাপুর, আজও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

ঈদুল ফিতরের একদিনের ছুটি কাটিয়ে আবারো ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটছে ট্রেন। এর মধ্য দিয়ে ব্যস্ততা ফিরেছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে।
ঈদের দ্বিতীয় দিনও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ।
মঙ্গলবার (১ এপিল) সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, যাত্রীরা ট্রেনের জন্য প্ল্যাটফর্মে টিকিট কেটে অপেক্ষা করছেন। তবে ছিল না যাত্রীদের ভিড়। যাত্রীদের ধীরে-সুস্থে ট্রেন উঠতে দেখা যায়।
ঈদের দ্বিতীয় দিন ৪৬টি আন্তঃনগর ট্রেন চলবে। সকাল থেকে শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। ট্রেনগুলোতে যাত্রীতে পরিপূর্ণ ছিল। এদিন যারা ভ্রমণ করছেন, তাদের বেশির ভাগ আবার আগে থেকে টিকিট কাটেননি।
অনেকে ট্রেন ছাড়ার আগমুহূর্তে কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে নিচ্ছেন। আজও স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেক যাত্রী সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। স্টেশনে কাজ করা কুলি-শ্রমিকরাও কাজে ব্যস্ত। তারা যাত্রীদের ব্যাগ টেনে নিয়ে যাচ্ছেন নির্দিষ্ট বগিতে।
যাত্রীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান করছেন। কাউকে সন্দেহ হলে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। স্টেশনের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও গাড়ির কোনো লাইন দেখা গেলেও ভিড় বা যানজট চোখে পড়েনি।
অগ্নিবীণা ট্রেনে জামালপুর যাচ্ছেন মো. অন্তর মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকায় ছোটখাট ব্যবসা করি। ঈদে বেচাকেনা বেশি ছিল। সেজন্য ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়ি যেতে পারিনি। তাই আজ পরিবার নিয়ে এক বছর পর গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।
তিনি বলেন, গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে কয়েকদিন আনন্দে কাটানো যাবে। আসলে আমরা এখন যান্ত্রিক হয়ে গিয়েছি। জীবনের ঘানি টানতে টানতে জীবনের আনন্দ করার সময় কোন দিক দিয়ে চলে যাচ্ছে, টের পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ঈদের ছুটিটা কোনোভাবেই মিস করতে চাই না।
একই ট্রেনের যাত্রী মো. রাসেল শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ভাই কাজ করে খাই। চাইলেই নিজের মতো করে কোথাও যেতে পারি না। ঈদের দিনও ডিউটি ছিল। আজ থেকে ছুটি পেয়েছি। তাই বাড়ি যাচ্ছি। কমলাপুর স্টেশনে এসে টিকিট নিয়েছি। কোনো সমস্যা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ভেবেছিলাম আজ ট্রেনে যাত্রী কম থাকবে। কিন্তু না, আজও দাঁড়িয়ে যাচ্ছে মানুষ। এর কারণ, ঈদের পর ট্রেনসংখ্যা কম থাকায় সব রুটে ট্রেন চলাচল করছে না। ফলে অনেকেই অন্য রুটে যাচ্ছে। তাই ভিড় একটু বেশি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে উপকূল এক্সপ্রেসে ঢাকায় ফেরা মো. জিসান বাংলানিউজকে বলেন, এবারের মতো এত সুন্দর ঈদযাত্রা কখনো করিনি। ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গিয়েছিলাম। ঈদ করে আজ ফিরলাম। খুব আরামদায়ক ভ্রমণ ছিল। এবার যেমন ব্যবস্থাপনা ছিল, সেটা যেন প্রতি বছর পাই।
কমলাপুর স্টেশনে দীর্ঘদিন কুলির কাজ করেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদের পর যাত্রীদের চাপ কম থাকে। তাই রিল্যাক্সে আছি। গত কয়েকদিন অনেক চাপ ছিল। আজ যাত্রী আছে, তবে কম। অনেকেই নিচের ব্যাগ নিজেই টানছেন। যাদের অনেক বেশি ব্যাগ, তারাই শুধু আমাদের ডাকেন। বুধবার থেকে ফিরতিযাত্রা শুরু হবে। তখন ভিড় হতে পারে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদে বহু যাত্রী ট্রেনে যাত্রা করেন। এবার আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার মিলে প্রতিদিন ৭০ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদযাত্রায় সব ট্রেন সঠিক সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।
ঈদযাত্রায় সব ট্রেন সঠিক সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৭১টি ট্রেন চলাচল করছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন ঢাকামুখী ৩০ হাজার ৪৯১টি টিকিট বিক্রি করছে। এ কয়দিন কমলাপুর স্টেশনে টিকিট ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আগামী ২ এপ্রিল থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু হবে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদযাত্রায় স্টেশনের শুরু থেকে ট্রেনের গন্তব্য পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। টিকিট যাচাইয়ের জন্য ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে ঢাকাগামী নয়টি ট্রেনের বিমানবন্দর স্টেশনের যাত্রাবিরতি বাতিল করা হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে জয়দেবপুরের টিকিট ইস্যু বন্ধ রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে ঈদযাত্রা নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে কমলাপুর রেলস্টেশনে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। টিকিট কাউন্টার, প্ল্যাটফর্মসহ সব জায়গায় র্যাব ও পুলিশ, আনসার সদস্যের পাশাপাশি রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীও ছিল।
কমলাপুর রেলস্টেশনের কর্মকর্তা (স্টেশন মাস্টার) আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঈদে একদিন ছুটি ছিল। আজ সকাল থেকে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস, এগারো সিন্ধুর প্রভাতী, তিস্তা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, অগ্নিবীণাসহ বেশ কয়েকটি ট্রেন কমলাপুর ছেড়েছে। ট্রেনগুলোতে যাত্রী ছিল মোটামুটি। আবার ঢাকায় পৌঁছেছে উপকূল এক্সপ্রেসসহ কয়েকটি ট্রেন।
তিনি বলেন, বুধবার থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু হবে। ট্রেনগুলো সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই লক্ষ্যে ঢাকা থেকে সঠিক সময়ে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো ছেড়ে যাচ্ছে, যেন দেশের বিভিন্ন স্টেশন থেকে নির্ধারিত সময়ে ট্রেনগুলো আবার ঢাকায় ফিরতে পারে। এটা করতে পারলে ফিরতি যাত্রাও স্বস্তিদায়ক হবে।
রাজধানীতে বিরাজ করছে ছুটির আমেজ। এবারের ঈদে সরকারি ছুটি নয় দিন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার।