লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদের জামাত

উপমহাদেশের মধ্যে আয়তনের দিক দিয়ে অন্যতম বড় দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদুল ফিতরের নামাজ সম্পন্ন হয়েছে।
উপমহাদেশের মধ্যে আয়তনের দিক দিয়ে অন্যতম বড় দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদুল ফিতরের নামাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন লাখো মুসল্লি।
সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত এই ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা মাহফুজুর রহমান। জামাতে দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলা, পার্শ্ববর্তী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা অংশ নেন।
নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও বিশ্ববাসীর মঙ্গল কামনায় মোনাজাত করা হয়। যেখানে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা হয়।
জামাতে অংশ নেওয়া বগুড়ার সোলায়মান আলম বলেন, অনেক দিন থেকেই পরিকল্পনা ছিল গোর-এ শহীদ মাঠে নামাজ আদায় করার। এবার সুযোগ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, সার্বিক দিক মিলে ভালোই লেগেছে। একসঙ্গে এতো মানুষের সঙ্গে আগে কখনো নামাজ আদায় করতে পারিনি। এজন্য খুব ভালো লাগছে।
জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা থেকে আসা তারেক রহমান বলেন, প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূর থেকে এখানে নামাজ পড়তে এসেছি। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মাঠ। একসঙ্গে অনেক মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। আমিও প্রথমবারের মতো নামাজ পড়লাম। দেশ, পরিবার, ফিলিস্তিনের মুসলমান সবার জন্য দোয়া করেছি। আগামীতেও সুযোগ পেলে আসব ইনশাআল্লাহ।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন বলেন, আমি এবার প্রথম এই জামাতে অংশ নিয়েছি। আমি দেখেছি দিনাজপুরবাসী ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও মানুষজন এখানে নামাজ আদায় করতে এসেছেন। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এই গোর-এ শহীদ ঈদগাহ ময়দান। মুসল্লিরা আনন্দ, উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নামাজ আদায় করেছেন।
মুসল্লিদের ভাষ্যমতে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর সুশৃঙ্খলভাবে এবং বেশি মুসল্লির উপস্থিতিতে এই নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই জামাত পুলিশ নিরাপত্তার বলয়ে ঢেকে রেখেছিল। এক সপ্তাহ ধরে এই মাঠকে নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিল নিরাপত্তা বাহিনী। কোনো ধরনের অঘটন ঘটতে পারেনি।
পুলিশ সুপার বলেন, আমাদের পোশাকধারী পুলিশ ছিল, সাধা পোশাকে পুলিশ ছিল, ডিবি পুলিশ ছিল এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ছিলেন। সর্বোপরি সাধারণ জনগণের সহযোগিতা ছিল।
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, দিনাজপুর অত্যন্ত ঐতিহ্যবাহী জেলা। এখানকার মানুষ ভদ্র, নম্র ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও রুচিসম্মত। সর্বসাধারণ জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে। আমরা চেষ্টা করেছি যেন সবাই সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন আসেন। তাদের জন্য একটা অনুকূল নামাজের উত্তম পরিবেশ আমরা তৈরি করতে চাই। জেলা প্রশাসনের উদ্দেশ্য সরকারের নীতি নির্ধারণ অনুযায়ী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইন অনুযায়ী কাজ করে সর্বসাধারণকে আরও একটু এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এখানে সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায় করার জন্য পুলিশ, সাংবাদিক সবাই সহযোগিতা করেছেন।
এর আগে সকাল ৭টা থেকে মাঠে প্রবেশের জন্য গেটগুলো খুলে দেওয়া হয়। এ সময় সবাইকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করানো হয়। পুরো মাঠটি ছিল সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণাধীন। ছিল ওয়াচ টাওয়ার ও ড্রোন। যার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মাঠটিকে নজরদারিতে রাখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। মাঠে র্যাব, পুলিশ, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন। এছাড়া প্রতিটি কাতারে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। ইসলামী ঐতিহ্যকে ধারণ করে পুরো মিনার সিরামিকস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে। ২০১৭ সাল থেকেই দিনাজপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করে আসছেন।