‘ঈদ মোবারক, স্যার ঈদ মোবারক’

সতের বছরের লম্বা বিরতির পর জাতীয় ঈদগাহ মাঠে সরকারপ্রধান হিসেবে ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
দীর্ঘ সময় পর ঈদের জামাতে সরকারপ্রধানকে কাছে নামজ পড়তে মানুষের মধ্যেও যেমন উচ্ছ্বাস ছিল, তাতে সাড়া দিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসও।
জামাতের পর আর মোনাজাতের আগে সবার উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। আর মোনাজাতের পর উৎসুক মানুষের সঙ্গে হাত হাত মেলাতে জাতীয় ঈদগাহ থেকে বিদায় নেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান।
প্রধান উপদেষ্টার হাত হাত মেলানোর সময় অনেকেই বলছিলেন, ‘ঈদ মোবারক’।
সোমবার রাজধানীতে ঈদুল ফিতরের প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় হাই কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠে সকাল সাড়ে ৮টায়।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঈদ জামাতে অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টা ঈদগাহ মাঠে আসার পরে তার জন্য নির্ধারিত আসনে বসেন। জামাতে রাষ্ট্রের শীর্ষ ও সরকারপ্রধানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইমামের পেছনে আড়াইশ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারেন, এমন এলাকা র্বাঁশ দিয়ে বেষ্টনী করে রাখা হয়।
এই বেষ্টনীর বাইরে সাধারণ মুসল্লীরা নামাজ আদায় করতে পারেন। মুহাম্মদ ইউনূস মাঠে পৌঁছালে সাধারণ মানুষ বাশেঁর বেষ্টনীর কাছে দাঁড়িয়ে ভিড় করেন।
ভিড় ক্রমেই বড় হতে শুরু করলে প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা অনুরোধ করতে থাকেন নিজ নিজ জায়গায় চলে যেতে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে দেখে চলে যান মানুষজন।
একই অবস্থা হয় মুহাম্মদ ইউনূসের শুভেচ্ছা বক্তব্যের সময়। তার বক্তব্য কাছ থেকে শুনতে অনেকে সামনে চলে আসতে শুরু করেন। আর সামনের সারিতে বসা ব্যক্তিরা দাঁড়িয়ে পড়েন প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সরাসরি দেখতে। এসময় অন্যরা সবাইকে বসার অনুরোধ জানাতে থাকেন। কয়েক মিনিট পড়ে দাঁড়ানো ব্যক্তিরা গা ঘেঁষাঘেষি করে বসে যান।
প্রধান উপদেষ্টা তার শুভেচ্ছা বক্তব্যের শুরুতে বলেন, “আজকে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি বাজারে, প্রতিটি গঞ্জে, প্রতিটি শহরে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা জাতির পক্ষ থেকে জামাতে যারা যেখানে শরিক হয়েছেন, তাদেরকে ঈদ মোবারক জানাচ্ছি। যারা ঈদের জামাতে শরিক হবার সুযোগ পাননি, তাদেরকেও আমরা ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।
“আমাদের মা-বোনেরা, মহিলারা যারা ঘরে আছেন, তাদেরকেও আমরা জাতির পক্ষ থেকে ঈদ মোবারক জানাচ্ছি। আমাদর প্রবাসী শ্রমিকরা, যারা বিদেশে আছেন, সারা বছর কষ্ট করেছেন। আজকে হয়ত ঈদের জামাতে যেতে পারবেন, কিম্বা যেতে পারবেন না, কিন্তু জাতির পক্ষ থেকে আমরা তাদেরকেও ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আজকে একটা ঐক্য গড়ে তোলার দিন। আমরা স্থায়ীভাবে এই ঐক্য গড়ে তুলতে চাই, ঈদের জামাতে এটাই আমাদের কামনা।”
বক্তব্য শেষে সকলের মঙ্গল কামনা করে দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন নির্ধারিত ইমাম। মোনাজাত শেষে সাধরাণ মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বাঁশের বেষ্টনীর কাছে চলে যান প্রধান উপদেষ্টা।
নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরে থেকেই বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা অংশের এক পাশে দাঁড়িয়ে অনুরোধে সাড়া দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেন প্রধান উপদেষ্টা। সব বয়সী মানুষ মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে করমর্দন করেন।
এসময় মানুষজনের মধ্যে রীতিমত হুড়োহুড়ি শুরু হলে প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের তৎপর হতে দেখা যায়।
মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে হাত রেখে অনেকেই বলতে থাকেন, ‘ঈদ মোবারক, স্যার ঈদ মোবারক’। মুহাম্মদ ইউনূসও একের পর এক ব্যক্তির সঙ্গে হাত মেলাতে মেলাতে ফটকের দিকে অগ্রসর হন। এভাবেই তিনি ইদগাহ মাঠ থেকে বের হন।