বৃহস্পতিবার ০৩ এপ্রিল ২০২৫, চৈত্র ১৯ ১৪৩১, ০৪ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মানুষ আসছে, জমে উঠছে ঈদ আনন্দ মেলা

 প্রকাশিত: ১৬:১৭, ৩১ মার্চ ২০২৫

মানুষ আসছে, জমে উঠছে ঈদ আনন্দ মেলা

ধানমণ্ডি থেকে সাড়ে তিন বছরের জমজ দুই ছেলে সন্তানকে নিয়ে ঈদ আনন্দ মেলায় ঘুরতে এসেছেন আরমান আদিব।

বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে দুই দিনব্যাপী ঈদ আনন্দ মেলার স্টল ঘুরে দেখানোর পর বাবা যখন ছেলেদের ছবি তুলছিলেন, তখন কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে।

বাচ্চাদের ভালো লাগার অনুভূতি তুলে ধরে আরমান বলেন, “খুবই এনজয় করছে ওরা। আমরা ঈদের নামাজ পড়লাম। আনন্দ র‍্যালি দেখলাম। এখন মেলায় ঘুরে বেড়ালাম। ওদের খুবই ভালো লেগেছ।”

বাচ্চারাও জানালো, তারা আরও ঘুরে দেখতে চায়।

ঈদ উৎসবের অনুষঙ্গ হিসেবে গ্রাম বাংলা ও ঢাকার ঐতিহ্য, খাবার পসরা তুলে ধরতে ঈদের দিন ও পরদিন এ মেলা আয়োজন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

মেলায় বিভিন্ন পণ্যের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ২০০টির বেশি স্টল রয়েছে। দুই দিনই মেলা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে আগেই।

মেলার প্রথম দিন তথা ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় শুরুতে বাণিজ্যমেলার পুরনো মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজ শেষে সকাল ৯টার দিকে আনন্দ মিছিল শুরু হয় ডিএনসিসির উদ্যোগে।

বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে দিয়ে আগারগাঁও হয়ে খামার বাড়ি মোড় পার হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের দিকে এগিয়ে যায় মিছিলটি। তারপর সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে গিয়ে সাড়ে নয়টায় শেষ হয় আনন্দ মিছিল।

এরপর চলতে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সেখানে আর এদিকে সকাল দশটায় মেলার জন্য চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

ঈদের জামাত ও আনন্দ মিছিলে দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন কাপড়ের ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ। ৫৮ বয়সী ফিরোজ এসেছেন তালতলা থেকে।

তার সঙ্গে থাকা এক মেয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে চাকরি করছেন, অপর মেয়ে এখন বিএসসি ইঞ্জনিয়ারিং এ পড়ছেন।

তার বললেন, “সবাই মজা পেয়ে গেছে। সামনের বছর আরও বেশি মানুষ হবে দেখবেন। আমি দুই মেয়ে নিয়ে আসছি। আমার মেয়েরাও মজা পেয়ে গেছে।

“মিছিল শেষ করে (মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে) মেলায় যাই (বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে), বললাম চল বাসে যাই। না, তারা হেঁটেই আসবে। সবার আনন্দ-উল্লাস দেখে দেখে যাবে।”

তবে বাচ্চাদের না নিয়ে আসতে পারায় নিজের কষ্টের কথা ব্যক্ত করেন নাঈম হোসেন। তিনি এসেছেন মিরপুর ১২ সেকশনের ডি ব্লক থেকে।

বাচ্চাদের নিয়ে আসতে না পারার কারণ হিসেবে বলেন, “আমার মেয়ের বয়স ছয় বছর। ছেলে ছয় মাসের। রাতে মেহেদী দিয়ে, একটু এলাকায় ঘুরে অনেক রাত পর্যন্ত জেগেছিলাম। সকালে বাচ্চারা ঘুমাচ্ছিল, তাই তুলি নাই।”

নাঈম সকাল সাড়ে ৭টায় ডিএনসিসির আয়োজিত ঈদের নামাজে অংশ নিতে বেরিয়ে পড়েন। রাস্তায় বাস, অটোরিকশা না পেয়ে এসেছেন ব্যাটারিচালিত রিকশায়।

ঈদের নামাজ, ঈদ আনন্দ মিছিল শেষে মেলায় ঘুরে গিয়ে আবার বাচ্চাদের নিয়ে বিকালে আসবেন বলে জানালেন তিনি।

মেলা ঘুরে ঘুরে সময়ের সঙ্গে ভিড় জমতে দেখা যায়। যদিও দুপুর পর্যন্ত বেশিরভাগ স্টলই চালু হয়ে যায়। ঈদের নামাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতার আনাগোনা কম ছিল। তবে ফুচকা, মুড়ি মাখাসহ খাবারের দোকানগুলোতে ছিল ক্রেতা সমাগম।

‘ফয়সাল ভাইয়ের ফুচকা’র ফয়সাল এসেছেন গোড়ান থেকে। ওখানকার 'জনপ্রিয়' এ দোকানি বিভিন্ন মশলায় মুড়ি মাখান বলে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে নিজ এলাকাতে। ঝাল চাইলে নাগা মরিচ দিয়েও মাখিয়ে দেন তিনি।

মেলায় স্টল নিয়েও একইরকম সাড়া পাচ্ছেন তরুণ ফয়সাল। তার সহযোগিতায় এসেছেন বাবা-মা ও স্ত্রী।

ফয়সাল বলেন, “যেমনটা আশা করেছিলাম, ঠিক তেমন আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি। মেলা খুলে দেওয়ার পর ১০টা থেকে চাপ বাড়ছেই। সবাই সিরিয়াল ধরে খাচ্ছেন।”

কাজের ফাঁকে কথা বলারও ফুরসত পাচ্ছিলেন না ফয়সাল। কিছু প্রশ্নের উত্তর তাই দিচ্ছিলেন বাবা নিজেই।

মেলা ছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ঢাকার আগারগাঁওয়ে ঈদের নামাজ ও ঈদ আনন্দ মিছিল হয়েছে।

ব্যান্ড পার্টির বাজনা, ঘোড়ার গাড়ি এবং মুঘল আমলের ইতিহাস তুলে ধরা নানা ধরনের ছবি নিয়ে এ মিছিলে ঈদ মানেই সম্প্রীতি, ঈদ মানেই ঐক্য; ঈদ এল সুখের বার্তা নিয়ে’ সংবলিত নানা ধরনের সামাজিক ও ঐক্যের বার্তা তুলে ধরা প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। এ সময় মিছিলে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা ‘ঈদ মোবারক’সহ নানা ধররেন স্লোগান তোলেন।

ওই মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।

মিছিল শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া।

ঘরে বসে কেবল টেলিভিশন না দেখে এখন থেকে প্রতিবছর বড় পরিসরে ঈদ উৎসব উদযাপন হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

শিশুদের আনন্দের জন্য নাগরদোলা ও খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে শিশুদের জন্যও নানা আয়োজনও রয়েছে।