দেশে ও বিদেশে ৬৮ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদ’ আওয়ামী লীগের গোলাপের: দুদক

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়িসহ দেশে-বিদেশে ৬৮ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এই ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক গোলাপের বিরুদ্ধে একটি মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
বুধবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি প্রক্রিয়াধীন থাকার কথা বলেছেন সংস্থা মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আক্তার হোসেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটি দায়ের করছেন দুদকের উপপরিচালক নুরুল হুদা।
মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) গোলাপের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক বলেন, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্সে ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি গড়েছেন, যার মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩২ কোটি টাকা।
অভিযোগের বরাতে তিনি বলেন, ৩২ কোটি ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ৯৬০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন ও পারিবারিক ব্যয় ২৫ লাখ ৮২ হাজার ২৬৭ টাকা মিলিয়ে গোলাপ মোট ৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৪ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।
এই অর্জিত সম্পদের বিপরীতে আবদুস সোবহান গোলাপের বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৩ হাজার ৬২৯ টাকা তুলে ধরে দুদক কর্মকর্তা বলেন, বাকি ৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৫ টাকার সম্পদ তিনি ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে’ অর্জন করেছেন।
এছাড়া গোলাপের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানে তার নিজের ৫১টি ব্যাংক হিসাবে ৯৭ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৮ টাকার ‘অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের’ অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে তুলে ধরেন তিনি।
দুদকের ডিজি বলেন, গোলাপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হয়েছে।
এর আগে গত ৯ জানুয়ারি গোলাপ এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেয় আদালত।
একই সঙ্গে তাদের ৫৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দিয়েছেন।
আদালতের সম্পদ জব্দের আদেশের তথ্য অনুযায়ী, কারাগারে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য গোলাপ, তার স্ত্রী গুলশান আরা মিয়া, ছেলে ইভান সোবহান মিয়া ও মেয়ে আনিশা গোলাপ মিয়ার নামে এসব স্থাবর সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব রয়েছে।
এর মধ্যে গোলাপ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা মিরপুরের একটি পাঁচতলা বাড়িও জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাড়িগুলোর মধ্যে আটটি সিঙ্গেল রেসিডেনসিয়াল কন্ডো ইউনিট এবং অপরটি ডুয়েল ফ্যামিলি ইউনিট বলে তথ্য দেওয়া হয়েছে দুদকের আবেদনে।
এর আগে গত ২ অক্টোবর সাবেক এ সংসদ সদস্যের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় একই আদালত।
সরকার পতনের পর আত্মগোপনে থাকা গোলাপকে রাজধানীর নাখালপাড়ার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঢাকায় একটি হত্যার ঘটনাসহ একাধিক অভিযোগে মামলা রয়েছে।