রায়ে স্বস্তি, কর্মসূচি প্রত্যাহার চিকিৎসকদের

চিকিৎসা পেশার ‘মর্যাদা রক্ষার’ রায় পাওয়ায় পাঁচ দফা দাবিতে দেশজুড়ে চলা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো।
বুধবার গভীর রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে বুধবার রায় দেয় হাই কোর্ট।
রায়ে আদালত বলেছে, এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া আজ পর্যন্ত যারা ডাক্তার পদবি ব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে বৃহস্পতিবার থেকে আইন ভঙ্গ করে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বুধবার ডাক্তার পদবি ব্যবহার সংক্রান্ত রিট মামলা নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছে আদালত। এর মধ্য দিয়ে একদিকে চিকিৎসকরা যেমন ন্যায়সংগত রায় পেয়েছেন, তেমনই সাধারণ মানুষও এই রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
“আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবিটি বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকি দাবিগুলোর ব্যাপারেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।”
চিকিৎসা পেশার মর্যাদা রক্ষাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সম্প্রতি লাগাতার কর্মসূচি শুরু করে চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলনের কারণে সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় সার্বিক বিবেচনায় চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো চলমান কর্মবিরতি প্রত্যাহার করছে।
পাশাপাশি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ দফা সংক্রান্ত দাবিগুলোর সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি জানানোর আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তা না হলে চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা পুনরায় কঠোর কর্মসূচি দেবেন।
কয়েকদিন ধরে চলা কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় বুধবার সারাদেশের হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগে কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকরা। এতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। পাশাপাশি সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকরা ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেন।
ওই দিনই দুপুরে হাই কোর্ট রায় দেয়- এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া আর কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবে না। এতে চিকিৎসকদের পাঁচ দাবির একটি পূরণ হয়।
বাকি চার দাবিতে বুধবার বেলা ১টায় শহীদ মিনার থেকে সচিবালয় পর্যন্ত লংমার্চ করেন চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষাভবনের কাছে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। বেলা আড়াইটার দিকে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান।
যেভাবে আন্দোলন
বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল বা ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের পাল্টায় কর্মসূচি দেন চিকিৎসক, মেডিকেল শিক্ষার্থীরাও।
এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবে না- এমন দাবি তুলে ক্লাস বর্জনসহ নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেন দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।তাদের দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নেন। একপর্যায়ে যোগ দেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা।
পরে শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং চিকিৎসক পেশাজীবীদের ১৭ সংগঠন নিয়ে ‘সর্বস্তরের চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থী’ ব্যানারে আন্দোলন চলে। এই ব্যানারে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন আর ইন্টার্নরা প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন।
চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবি-
১. এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবে না। বাংলাদেশে ‘ডিপ্লোমা চিকিৎসক’ নামে বিভ্রান্তিকর কোনো পদবির প্রচলন করা যাবে না, যার অস্তিত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা বিশ্বের কোথাও নেই।
২. ‘রেজিস্টার্ড চিকিৎসক (এমবিবিএস /বিডিএস) ছাড়া অন্য কেউ স্বাধীনভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবে না’- এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
৩. আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স কারিকুলাম সংস্কার কমিটি গঠন করে তাদের কোর্স কারিকুলাম পুনঃনির্ধারণ এবং মানহীন সব ম্যাটস (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
৪. জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য শূন্যপদে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ এবং চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪ বছরে উন্নীত করতে হবে।
৫. অবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো (পে-স্কেল) তৈরি করতে হবে।
অন্যদিকে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা সরকারি/বেসরকারি পর্যায়ে নতুন পদ তৈরি, অবিলম্বে দশম গ্রেডে শূন্য পদে নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে।
পাশাপাশি তারা চার বছরের অ্যাকাডেমিক কোর্স বহাল রেখে কারিকুলাম সংশোধন ও ভাতাসহ এক বছরের ইন্টার্নশিপ, প্রস্তাবিত ‘অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল বোর্ড’ বাতিল করে ‘মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ’ নামে বোর্ড গঠন এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও বিএমঅ্যান্ডডিসি স্বীকৃত ক্লিনিক্যাল বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।