চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে

পুলিশের বাধায় চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের লংমার্চ আটকে যাওয়ার পর চার দফা দাবি নিয়ে তাদের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে গিয়েছেন।
১৫ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সোহাগ।
বুধবার দুপুর আড়াইটার কিছু পরে শিক্ষাভবন মোড় থেকে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান তারা।
দুপুর সোয়া একটায় শহীদ মিনার থেকে কয়েকশো চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে রওনা হয়েছিলেন।
মিছিলটি শিক্ষা ভবনের সামনে পৌঁছালে তা পুলিশ আটকে দেয়। পরে সেখানেই বেরিকেডের ওপারে দাঁড়িয়ে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনরতরা। অনেকে সড়কের ওপর বসে পড়েন
এ সময় পুলিশের কর্মকর্তারা চিকিৎসকদের কাছে তাদের একটি প্রতিনিধি দলকে সচিবালয়ে পাঠানোর অনুরোধ করেন। তবে চিকিৎসকদের দাবি ছিল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যেন চিকিৎসকদের কাছে আসেন। দীর্ঘ সময় আলোচনার পর বেলা আড়াইটার দিকে সচিবালয়ে যান চিকিৎসকদের প্রতিধিনি দলটি।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১০টার পর থেকে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের চিকিৎসরকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়।
সেখানে তারা ম্যাটস শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে স্লোগান ধরেন। ম্যাটসদের অনেকগুলো দাবির একটা তাদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ লেখার বৈধতা দেওয়া।
এর মধ্যে বেলা ১২টার দিতে খবর আসে ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।
একটি দাবি পূরণ হলেও বাকি চারটি আদায়ে এরপর চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য সচিবালয় অভিমুখে যাত্রার সিদ্ধান্ত নেন।
পাঁচ দফা দাবি আদায়ে গঠিত ন্যাশনাল স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য চিকিৎসক তাওহিদুর রহমান বলেন, “আমাদের একটা দাবি পূরণ করা হয়েছে। এখন আমাদের আরও চারটা দাবি রয়েছে। তবে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা সচিবালয়ের যাব। চার দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছাড়ব না।"
‘সর্বস্তরের চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে মঙ্গলবার দিনভর কর্মসূচি পালনের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক নাদিম হোসাইন কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেছিলেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা এদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাহসমাবেশ করবেন এবং সেখান থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে লংমার্চ করবেন তারা।
এই ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার সকাল থেকে রাজাধানীসহ সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতিতে নামেন চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা।
এই কর্মসূচিতে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল এবং শিশু হাসপাতালসহ আরো কয়েকটিতে দেরিতে হলেও কোনো কোনো বিভাগের বহির্বিভাগে রোগী দেখেছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বহির্বিভাগ পুরোপুরি বন্ধ আছে। চিকিৎসকদের কর্মসূচির কথা জানা না থাকায় সেখানে সকাল থেকে রোগীদের ভিড় দেখা গেছে।
তবে আইসিইউ, সিসিইউসহ জরুরি চিকিৎসা বিভাগ চালু আছে।
চিকিৎসকদের চার দফা দাবি
১. ‘রেজিস্টার্ড চিকিৎসক (এমবিবিএস /বিডিএস) ছাড়া অন্য কেউ স্বাধীনভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবে না’ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
২. আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স কারিকুলাম সংস্কার কমিটি গঠন করে তাদের কোর্স কারিকুলাম পুনর্র্নিধারণ এবং মানহীন সকল ম্যাটস (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
৩. জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য শূন্যপদে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ এবং চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪ বছরে উন্নীত করতে হবে।
৪. অবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো (পে-স্কেল) তৈরি করতে হবে।