মৃত্যু সনদ নিতে ঘুষ, গণশুনানিতে কাঁদলেন নাগরিক

শিক্ষকের মৃত্যু সনদের জন্য সাত হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এছাড়া জন্মনিবন্ধনসহ নানা কাজেও দিতে হয় উৎকোচ। সিটি করপোরেশনকে নিয়মিত রাজস্ব দেন তবুও পান না কাঙ্ক্ষিত সেবা। এমন বঞ্চনার কথা বলতে গিয়ে কাঁদলেন সাত্তার চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি।
নাগরিক সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে ১৮টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে মঙ্গলবার গণশুনানির আয়োজন করে ডিএনসিসি। সেখানেই কথা বলতে গিয়ে কাঁদেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাত্তার চৌধুরী।
মোল্লারটেক, ইরাশাল এবং আজমপুর নিয়ে গঠিত ৫০ নম্বর ওয়ার্ড ২০১৮ সালে ডিএনসিসির সঙ্গে যুক্ত হয়।
মঙ্গলবারের গণশানিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, বাজার কমিটির নেতা, পাড়া মহল্লাভিত্তিক সোসাইটি নেতা এবং যুবক, ছাত্র প্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজন অংশ নেন।
তারা রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ-পার্ক, জলাবদ্ধতা, মশার উপদ্রব, সড়কবাতি না থাকা, জন্ম ও মৃত্যু সনদ নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন ডিএনসিসির কর্মকর্তাদের কাছে।
আবদুর সাত্তার চৌধুরী বলেন, ফি নিয়ে একটি জটিলতার কারণে তিন বছর ধরে ট্রেড লাইসেন্স করাতে পারছেন না তিনি। এ বিষয়ে আঞ্চলিক অফিস থেকে কোনো সহযোগিতাও পাচ্ছেন না।
তিনি অভিযোগ করেন, জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্যু সনদ নিতে চরম হয়রানির শিকার হতে হয় মানুষকে।
“সম্প্রতি আমার স্কুলের শিক্ষক মারা গেছেন। সেখানে মৃত্যু সনদ আনতে গিয়ে আমাকে সাত হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। জন্মনিবন্ধন করাতে গেলে ফি লেখা আছে ৫০ টাকা বা ১০০ টাকা। কিন্তু আপনি যান, দেখবেন আপনার কাছে ২০০, ৩০০ টাকা চেয়ে বসে থাকে।”
এসব কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।
৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আশরাফুল হক অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের কারণে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হচ্ছে কম।
“হোল্ডিং ট্যাক্স ঠিকমতো আসছে না, এর মূল কারণ ঘুষ বাণিজ্য। এটা বাংলাদেশের একটা মহা সমস্যা। ঘুষ বাণিজ্যের কারণে আমরা ট্যাক্স দিচ্ছি না। দেখা গেছে ৩ লাখ টাকার ট্যাক্স ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে ১ লাখ ২০ হাজার করে দিচ্ছে।”
৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের তলনা এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদ মিয়া গণশুনানিতে বলেন, ওয়ার্ডের বাসিন্দা হিসেবে তারা ২০১৮ সাল থেকে সিটি করপোরেশনকে কর দিচ্ছেন। কিন্তু সেবা পাচ্ছেন না।
“২০১৮ সাল থেকে আমরা সিটি করপোরেশনে, এখন ২০২৫ সাল চলে। সিটি করপোরেশন ১৮টি ওয়ার্ডে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন দেখাতে পেরেছে? ট্যাক্স নিচ্ছেন কিন্তু আমাদের কী সেবা দিচ্ছেন?”
সাদেক আহমেদ রিপন নামের একজন বলেন, আশকোনার মদিনা টাওয়ার থেকে দক্ষিণখান পর্যন্ত আব্বাসিয়া সড়কের একটি অংশ এখনও পানিতে ডুবে থাকে। পানি এত নোংরা যে লোকজন নামাজ পড়তে যেতে পারছে না, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে, প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
“দক্ষিণখানের কোথাও কোনো পানি নাই। কিন্তু আমাদের ওই রাস্তা এখনও পানির নিচে। বর্ষার আগেই আমাদের ওই সড়কে বর্ষা চলছে। আমরা চাই ওই রাস্তাটি চলাচলযোগ্য করা হোক।”
গুলশানে ডিএনসিসি নগর ভবনের হলরুমে আয়োজিত গণশুনানি শুরু হয় ১১টায়। গণশুনানিতে উপস্থিত থাকার কথা ছিল ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের। তবে তিনি আসেন বেলা ১টায়।
অন্য একটা বৈঠকে থাকায় গণশুনাতিতে থাকতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন এজাজ।
পরে তিনি বক্তব্যে বলেন, ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ায় ডিএনসিসির আকার বেড়েছে, কিন্তু লোকবল না বেড়ে আগের চেয়ে বরং কমেছে। এতে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছেন না তারা।
“আমাদের আগের যে জনবল ছিল, রিটায়ারমেন্ট, মৃত্যু, ডেপুটেশনে অন্য জায়গায় চলে যাওয়ায় তা আগের চেয়ে কমেছে। সীমিত জনবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত ১৮টি ওয়ার্ড। খাল, ড্রেনেজ ব্যবস্থা যুক্ত হয়েছে। এই অতিরিক্ত দায়িত্ব নিলেও একজন লোকও বাড়েনি।
“এ কারণে আমাদের জনবল বাড়াতে হবে, যন্ত্রপাতিও বাড়াতে হবে। আমরা ডেপুটেশনে কিছু লোক পাচ্ছি, তবে পুরোপুরি সেবা দিতে হলে লোকবল নিয়োগ করতে হবে।”