ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচার দাবি, শাহবাগে বিক্ষোভ

ধর্ষণ মামলার বিচার অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করার দাবিতে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘সকাল-সন্ধ্যা অবস্থান’ কর্মসূচি শুরু করেন। পরে সোয়া ১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
তাদের অবরোধের কারণে আধা ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ মোড় দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে বেলা পৌনে ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা আবার জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন।
এ সময় তারা ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’; ‘ধর্ষকদের বিচার কর, নইলে হাতে চুরি পর’; ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকদের ফাঁসি চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
প্রতিবাদকারীদের একজন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “বর্তমানে ধর্ষণ পরিস্থিতি আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। বর্তমান সরকার ধর্ষণের বিচারের সময় ১৮০ দিন থেকে কমিয়ে ৯০ দিনে নামিয়ে আনার কথা বলেছেন। আর তদন্ত শেষ করতে বলেছেন ১৫ দিনের মধ্যে।
“আমাদের কথা হচ্ছে, ১৫ দিনের মধ্যে যদি তদন্ত শেষ হয়, তাহলে তার বিচার শেষ করতে কেন ৯০ দিন সময় লগবে? একজন ধর্ষককে কেন বসিয়ে রাখা হবে এতোদিন? আমরা দ্রুততম সময়ে ধর্ষকদের ফাঁসি চাই। আমরা আজকে এখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করব, এখানেই ইফতার করব।”
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্রী হেনস্তা’, মাগুরায় ‘শিশু ধর্ষণ’সহ বিভিন্ন স্থানে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বিদ্বেষের ঘটনায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়েছেন।
এর মধ্যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল রোববার বলেন, ধর্ষণ মামলার বিচার ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করার বিধান রেখে আইনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পাশাপাশি আসামির জামিন না দেওয়া এবং তদন্তের সময় অর্ধেকে নামিয়ে ১৫ দিন করার ভাবনা রয়েছে।
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী রুভা বলেন, “মেয়েরা এখন ঘরেও সেইফ না। বাবার কাছে, শিক্ষকের কাছে ধর্ষিত হচ্ছে। এরপর সে সুস্থ্য হলেও ট্রমা থাকে, সোসাইটি তাকে খারাপ চোখে দেখে। আমরা এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ চাই, আর একটা ধর্ষণের ঘটনাও দেখতে চাই না।”
শাহরিয়ার নামে একজন বলেন, “আমরা চব্বিশের গণআন্দোলন করেছি, এরপর কীভাবে ধর্ষকের সাহস হয় আমার বোনকে ধর্ষণ করার? ধর্ষকের কালো হাত ভেঙে দিতে হবে।
“দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকের ফাঁসি দিতে হবে। অন্যথায় আমরা ছাত্রসমাজ রাস্তা ছাড়ব না।”
ঢাকা কলেজের আরেক শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ বিন নূর হোসাইন বলেন, “একের পর এক ধর্ষণ হয়ে যাচ্ছে। ধর্ষকের শাস্তি যদি সময় মতো দেওয়া হতো, পরবর্তী ঘটনাটা ঘটত না।”
এদিকে শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচি ঘিরে শাহবাগে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। প্রথমে শিক্ষার্থীরা জাদুঘরের সামনে টিএসসি থেকে শাহবাগগামী প্রধান সড়কে অবস্থান নেন। পুলিশের অনুরোধে তারা যান চলাচল স্বাভাবিক রেখে জাদুঘরের সামনে একপাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
তখন পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “তাদের শাহবাগ মোড়ে কর্মসূচি ছিল। জনদুর্ভোগ বিবেচনায় তারা জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়েছে। এখানে তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকবে বলে জানিয়েছে।”