মাগুরার শিশুটিকে দেখলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বললেন ‘সরকার তৎপর’

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মাগুরায় ‘ধর্ষণের শিকার’ হওয়া শিশুটিকে দেখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দোষীরা যাতে শাস্তি থেকে ছাড় না পায়, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় ‘সোচ্চার ভূমিকা নিয়েছে’।
এছাড়া নারীরা যেন ঘরে-বাইরে নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে কাজ করে যেতে পারেন, তাদের নিরাপত্তা রক্ষারও আশ্বাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা।
সতর্ক করে তিনি বলেছেন, “নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে যারা বাধা দিতে আসবে তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে।"
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রোববার সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচে গিয়েছিলেন তিনি। সে সময়ে মাগুরায় বোনের বাড়িতে গিয়ে ‘ধর্ষণের শিকার’ হওয়া আট বছর বয়সী শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর নেন ও তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “মাগুরা সদর থানায় চার জনকে আসামি করে যে মামলা হয়েছে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দোষীরা যেন কোনোভাবেই ছাড় না পায় এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোচ্চার রয়েছে।"
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার শিশুটির মাকে ফোন করে সার্বিক খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি ও সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) এনে ভর্তি করা হয় এবং পরে শুক্রবার রাতে তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়।
শনিবার ঢাকা মেডিকেলে শিশুটির অবস্থা ‘সঙ্কটাপন্ন’ জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা, এরপর তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হলেও সন্ধ্যায় তাকে সিএমএইচে আনা হয়।
ধর্ষণের ঘটনার তিন দিন পর শিশুর মা বাদী হয়ে সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলা করেন শনিবার।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, এ মামলায় মামলার শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজিব শেখের ভাই রাতুল শেখ (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগমকে (৪০) আসামি করা হয়েছে। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
হাসপাতালে পরিদর্শন শেষে সেখানে দাঁড়িয়ে নারী হয়রানি ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, "এ যাবৎ নারীর প্রতি যত সহিংসতা হয়েছে সেগুলোর তালিকা করে দ্রুত তদন্ত সম্পন্নপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিয়েছি।"
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।"
নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে সবাইকে সচেতন ও সোচ্চার থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, "আমাদের সকলকে পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ লালন করতে হবে।"
এসময় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।