সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ফাল্গুন ২৫ ১৪৩১, ১০ রমজান ১৪৪৬

ব্রেকিং

মব জাস্টিস-বিশৃঙ্খলাকারীদের জায়গা থেকেই গ্রেপ্তার: তথ্য উপদেষ্টা ধর্ষণ মামলায় জামিন পাওয়ার অধিকার আমরা রাখবো না: আইন উপদেষ্টা তারেক রহমানের উদ্যোগে মাগুরার সেই শিশুর জন্য আইনজীবী প্যানেল ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঈদের আগেই চলতি মাসের বেতন পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের বিচার করতে হবে: আইন উপদেষ্টা মাগুরার শিশুকে ধর্ষণ: ১৮০ দিনে বিচার শেষ করার নির্দেশ মাগুরার সেই শিশুর সব ছবি ইন্টারনেট থেকে অপসারণের নির্দেশ মাগুরার শিশুটিকে দেখলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বললেন ‘সরকার তৎপর’ কেরাণীগঞ্জে অন্তঃসত্ত্বা তরুণীকে ‘দলবেঁধে ধর্ষণ’, গ্রেপ্তার ২ ঈদের ট্রেনের আগাম টিকেট ১৪ মার্চ থেকে ধর্ষণের অভিযোগ, বাবা গ্রেপ্তার মাগুরায় শিশু ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্বর ঘেরাও ছাত্র-জনতার গাজীপুরে শিশুকে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ, যুবক গ্রেপ্তার যৌন নিপীড়ন: নরসিংদীতে পিটুনি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘চুনকালি’ সীমান্তে গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের লাশ হস্তান্তর করেছে বিএসএফ গাজায় ২০ লাখের বেশি মানুষের খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই : আল জাজিরা বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বদলাতে পারে: ভারতীয় সেনাপ্রধান

জাতীয়

অপারেশন ডেভিল হান্ট: অভিযান চললেও ফেরেনি স্বস্তি

ওএনপি২৪ নিউজ ডেস্ক

 আপডেট: ১০:৩৩, ৯ মার্চ ২০২৫

অপারেশন ডেভিল হান্ট: অভিযান চললেও ফেরেনি স্বস্তি

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অপরাধের মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণসহ নানা অপরাধের ঘটনা প্রতিনিয়ত সামনে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' নামের বিশেষ অভিযান চালালেও সাধারণ মানুষের মনে স্বস্তি ফেরেনি।

অভিযানের মাধ্যমে শত শত অপরাধী গ্রেফতার করা হলেও প্রশ্ন উঠেছে— প্রকৃত অপরাধীদের ধরা হচ্ছে, নাকি ছোটখাটো অপরাধীদের ধরে অভিযান সফল দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে? অভিযানের নামে কাদের টার্গেট করা হচ্ছে? এ নিয়ে জনমনে সংশয় রয়ে গেছে।

অপরাধ কমেনি, বাড়ছে আতঙ্ক

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষ এখনও নানা ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছেন। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান বলেন, দিনের বেলায় কিছুটা স্বস্তি থাকলেও রাতে বের হতে ভয় লাগে। ছিনতাই আগের মতোই হচ্ছে। পুলিশের টহল বাড়লেও অপরাধ বন্ধ হয়নি।

পুরান ঢাকার চকবাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, চাঁদাবাজরা আগের মতোই সক্রিয়। মাঝেমধ্যে বড় ধরপাকড় হয়, কিন্তু কয়েকদিন পর তারা আবার বেরিয়ে আসে। আসল গডফাদারদের ধরা হচ্ছে না বলেই হয়তো এসব ঘটছে।

গ্রেফতার সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু অপরাধ কমছে না

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ৮ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে 'অপারেশন ডেভিল হান্ট'-এ ১২ হাজার ৫০০ জনসহ মোট ৩০ হাজার ৭০৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে অভিযানের ফলাফল নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নতুন কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিযানের পরও অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি, বরং উদ্বেগ আরও বেড়েছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ৪২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে ৫৭টিতে পৌঁছেছে। দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

গণপিটুনির ঘটনা কিছুটা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। জানুয়ারিতে ১২ জন নিহত ও ১৮ জন আহত হয়, ফেব্রুয়ারিতে নিহত হয়েছেন ৮ জন এবং আহত ১৯ জন।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, পরিসংখ্যান দিয়ে সব সময় পরিস্থিতি বোঝা যায় না। জনগণের ভয় কেটেছে কিনা সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। অপরাধ দমন ও অপরাধীদের ধরতে সারা দেশে সমন্বিত অভিযান প্রয়োজন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল অপরাধের ভিডিও

সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে বেশ কিছু ছিনতাই ও ডাকাতির ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার বনশ্রী এলাকায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে ২০০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করা হয়। মোহাম্মদপুরেও ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ১৯ ফেব্রুয়ারি যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়, যেখানে দুই জন নিহত হয়।

রাজধানীর এক বাসিন্দা আসিফুল ইসলাম বলেন, অভিযানের পরপরই কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও আতঙ্ক এখনও কাটেনি। বিশেষ করে ঈদের আগে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে কি না, তা নিয়ে সবাই চিন্তিত।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে দেশে ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির ঘটনায় ১১৪৫টি মামলা হয়েছে, যা এক বছর আগে ছিল ৭৬৩টি। অর্থাৎ অপরাধের হার বেড়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শুধু ডেভিল হান্ট নয়, সব ধরনের অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

অপরাধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, শুধু ধরপাকড় করলেই অপরাধ কমবে না। অপরাধের শেকড় অনেক গভীরে। মূল হোতাদের আইনের আওতায় না আনলে এসব অপরাধ বারবার ফিরে আসবে। অভিযানের কার্যকারিতা বাড়াতে হলে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং গোয়েন্দা তথ্য কাজে লাগাতে হবে।

সরকারের অবস্থান

আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির সদস্যসচিব ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, অভিযানের ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে অবনতি হয়েছে। ছিনতাই ও ছোটখাটো অপরাধ বেড়েছে।

সরকারের দাবি, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরাই পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে 'প্রোপাগান্ডা' চালাচ্ছে এবং 'ডেভিল অ্যাক্টিভিজম' করছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, 'অভিযানের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতেই এই অভিযান।

জনসাধারণের প্রত্যাশা

সরকারের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কাটেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অভিযান চলবে এবং অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে। তবে জনমনে প্রশ্ন রয়ে গেছে— অভিযানে কি শুধু ছোট অপরাধীদের ধরা হচ্ছে, নাকি আসল গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে?

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া শুধু অভিযান চালিয়ে অপরাধ দমন সম্ভব নয়। অপরাধের শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধারণ মানুষ অপেক্ষায় আছে, কবে সত্যিকারের অপরাধীরা ধরা পড়বে!