ভিড়ে ঠাসা মেট্রোরেলে নারীদের ‘ভোগান্তি’, চান আরও আলাদা বগি

রাজধানীর মিরপুর-১০ থেকে মেট্রোরেলে নিয়মিত কারওয়ান বাজারে আসা-যাওয়া করেন সেলিনা ফেরদৌস, প্রথম দিকে সাধারণ বগিতে উঠলেও এখন শুধু যান নারীদের জন্য নির্ধারিত বগিতে, গাদাগাদি করে।
কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, “সাধারণ বগিতে উঠলে ‘রোষানলে’ পড়তে হয় পুরুষদের। এই বগিতে কেন, প্রশ্ন ওঠে। ধাক্কা দেয়, সিট ফাঁকা হলেও বসতে দেয় না, বাচ্চা নিয়ে উঠলে অগ্রাধিকার আসনও ছাড়ে না। বলে- উঠছেন যখন, ধাক্কা খান।”
মেট্রোরেলে এমন অভিজ্ঞতায় নারীদের জন্য আলাদা বগি বাড়ানোর কথা বলেন গৃহিণী সেলিনা ফেরদৌস। তার কথায়, মেট্রোরেলে ঢাকায় চলাচল সহজ হয়েছে, সময় বাঁচছে। তবে নারীদের চলাচলে ভোগান্তিও রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পুরুষরা ধরেই নিয়েছে, সেগুলো তাদের আসন। কিছু বললে অসহযোগিতামূলক আচরণ দেখা যায়। অনেক সময় নারী বগিতে পাঠিয়ে দেয়।
“কিন্তু আমাদের জনসংখ্যার তো অর্ধেকই নারী। পুরুষরা যদি এমন আচরণ করে তাহলে তো অর্ধেক বগি নারীদের হওয়া উচিত। আমরা সেটাও চাচ্ছি না, অন্তত দুইটা বগি আমাদের হোক।”
বর্তমানে প্রতিটি মেট্রোরেলে ছয়টি বগি রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম বগিটি নারীদের জন্য নির্ধারিত। বাকি পাঁচটিতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে নারী-পুরুষ উভয়ের। তবে গৃহিণী সেলিনা ফেরদৌসের মত সাধারণ বগিতে নারীদের বিড়ম্বনার কথা বলছেন প্রজ্ঞা মণি সাহাও।
মিরপুর ১০ নম্বরের এই বাসিন্দা বলেন, “সাধারণ বগিতে উঠলে পুরুষদের মাঝে দাঁড়াতে অসুবিধা ফিল করি। নারী বগিতেও এত ভিড় যে ঠেলাঠেলি করে উঠতে হয়। চাপের কারণে শরীর ব্যথা করে। ট্রেন বাড়ানো উচিত, নারী বগি দুইটা করলে সুবিধা হত। নাহলে দাঁড়াতেও অসুবিধা হয়।”
রাজধানীতে সড়কে জ্যাম ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যায় নগরবাসীর। সেখানে মেট্রোরেল হয়েছে আশীর্বাদ। যদিও পিক আওয়ারে ব্যাপক ভিড় ঠেলে প্রতিযোগিতা করে উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের। সেখানে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন নারীরা। ঘটছে যৌন হয়রানির ঘটনাও।
বুধবার ঢাকার মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী একটি মেট্রোরেলে নারীদের কোচে উঠে পড়া পুরুষ যাত্রীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশুদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। সেদিন বিকাল পৌনে ৫টার দিকে নিলুফার পারভিন মিতু নামে এক যাত্রী ফেইসবুকে বিষয়টি তুলে ধরেন, যা নজরে আসে মেট্রোরেল পরিচালনা কর্তৃপক্ষেরও। বিষয়টি তারা অনুসন্ধান করে দেখার কথা বলেছেন।
পেশায় চিকিৎসক নিলুফার পারভিন ‘বাংলাদেশ মেট্রোরেলওয়ে ইনফরমেশন’ নামে ফেইসবুক গ্রুপে লেখেন, বুধবার বিকালে তিনি মেট্রোরেলে উঠেছিলে ফার্মগেট স্টেশন থেকে। নারীদের জন্য সংরক্ষিত একমাত্র বগিতে ১০-১২ জন পুরুষ ছিলেন। বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে তারা এক শিশুসহ নারীদের যৌন নিপীড়ন করেন।
আগারগাঁও থেকে নিয়মিত সচিবালয়ে যাতায়াত করেন উম্মে হাবিবা। পিক টাইমে অনেক ভিড়ের কারণে ভোগান্তি কথা বললেন তিনিও।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে হাবিবা বলেন, “দম বন্ধ হয়ে আসে, নড়াচড়া করা যায় না। তারপরও জিনিসটা থাকার কারণে বাসায় যেতে পারছি, নাহলে রাস্তায় ইফতারের সময় হয়ে যেত। দেশে অনেক বেশি কর্মজীবী নারী আছে, ফলে আরেকটা বগি যোগ করলে তাদের চলাচল আরও সহজ হত।”
মেট্রোরেলের সচিবালয় স্টেশনে টিকিট সংগ্রহ করছিলেন ফাহমিদা আক্তার। তিনি বলেন, “এটা আমার জন্য অনেক হেল্পফুল। কিন্তু বর্তমানে একটা বগিতে অনেক বেশি সমস্যা হয়ে যায়, দাঁড়ানোরই অবস্থা থাকে না অনেক সময়।”
পিক টাইমে ভিড় বেশি হওয়ায় মেট্রোরেলে চলাচলে ভোগান্তি কথা বললেন মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর জনা গোস্বামী। প্রতিদিন তিনি পল্লবী থেকে সচিবালয়ে যান মেট্রোরেলে।
জনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকালে যখন ফিরি এবং সকালেও আসি এটাতে অনেক ভিড় হয়। বিশেষ করে মাঝখান থেকে যে নারীরা উঠে…অনেক গর্ভবর্তী, প্রতিবন্ধী, অসুস্থ নারী থাকেন। তারা সিট পর্যন্ত যেতে পারেন না।”
তিনি বলেন, “কর্মজীবী নারীদের জন্য মেট্রোরেল একটা গিফট। খুব অল্প সময়ে উত্তরা, মিরপুর থেকে সচিবালয়ে, মতিঝিলে আসা যাচ্ছে। এই গতিশীল যানবাহনের ফলে রাস্তায় অনেকটা কম সময় তাদের ব্যয় হচ্ছে। পরিবারে বা কর্মক্ষেত্রে অনেকটা সময় দিতে পারছে। কর্মক্ষেত্রেও নিশ্চয়তা…এই সময়ে বের হলে, ঠিক এই সময়ে পৌঁছে যাব। সিস্টেম খুব ভালো।”
মেট্রোরেলে নারীদের জন্য বগি বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা বলছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষও।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, “কিছু টেস্ট করতে হবে, সেটা নিয়ে কাজ করতেছি, একটু সময় লাগবে। আর ট্রেনের দুটো বগি বাড়াতে গেলে…স্ক্রিন ডোর নাই, সেগুলো তৈরি করতে হবে।”
আগামী দুই মাসের মধ্যে মেট্রোরেলের ‘হেডওয়ে’ কমিয়ে আনার কথাও বলেন তিনি।