ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাবে ১৪ হাজার কোটি টাকা লেনদেন!

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লাক মিয়ার ব্যাংক হিসাবে ১৪ হাজার কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের অভিযোগ ও মামলা: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত এই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করেছে। পাশাপাশি তার স্ত্রী মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে লাক মিয়াকেও আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দুটি দায়েরের তথ্য জানিয়েছেন সংস্থার মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। এর আগে, গত ১৪ জানুয়ারি আদালত লাক মিয়ার ১৯২টি স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও ১৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছিল।
ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের বিশাল অঙ্ক: দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে লাক মিয়ার ৪৯টি ব্যাংক হিসাবে ১৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে তার স্ত্রী মাহমুদা বেগমের ১৪টি ব্যাংক হিসাবে ৪৬১ কোটি টাকার লেনদেনও ধরা পড়েছে, যা দুদকের মতে ‘অস্বাভাবিক’।
আয় ও সম্পদের অমিল: দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, লাক মিয়া ২০১৬-১৭ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত তার মৎস্য খামার ও বাড়ি ভাড়া থেকে যথাক্রমে ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৪ হাজার ১৭৪ টাকা ও ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন। ১৯৯০-৯১ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত পারিবারিক ও অন্যান্য খরচের হিসাব ২ কোটি ৭৮ লাখ ৩ হাজার ৬০৬ টাকা। সব মিলিয়ে তার মোট আয় পাওয়া যায় ১৩ কোটি ১ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৪ টাকা। তবে এর মধ্যে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯ টাকার ‘গ্রহণযোগ্য উৎসের’ তথ্য মিলেছে।
এদিকে, লাক মিয়ার ৪১ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার টাকার স্থাবর ও ১৬ কোটি ৭৩ লাখ ৬৭ হাজার ১৪০ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯ টাকার বাইরে তার সম্পদ অর্জনের কোনো বৈধ উৎস মেলেনি।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ: এজাহারে বলা হয়েছে, লাক মিয়া সরকারি কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করেছেন। অন্যদিকে, তার স্ত্রী মাহমুদা বেগমের ‘অবৈধভাবে’ অর্জিত ১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকার সম্পদও তার স্বামীর ‘অবৈধ’ সম্পদের অংশ বলে দুদক অভিযোগ এনেছে।
দুদকের আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব লাক মিয়ার ১৯২টি স্থাবর সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছেন, যেখানে ৬ হাজার ৪০৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ জমি রয়েছে। এসব সম্পত্তির দলিল মূল্য ৩৯ কোটি ৭১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা: ক্ষমতার পরিবর্তনের পর গত ১৪ অক্টোবর আদালত লাক মিয়া, তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম ও দুই কন্যা মিনজু আক্তার এবং হাফসা আক্তারের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
রাজনৈতিক পরিচিতি ও নির্বাচন: লাক মিয়া দুইবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।