রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা অর্ধেকের বেশি কমাচ্ছে জাতিসংঘ

‘তহবিল ঘাটতির’ কথা তুলে ধরে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তায় খরচের পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমাচ্ছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।
এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে মাসিক ফুড রেশনের পরিমাণ জনপ্রতি সাড়ে ১২ মার্কিন ডলার থেকে কমে ছয় ডলার হওয়ার কথা বাংলাদেশকে জানিয়েছে ডব্লিউএফপি।
ডব্লিউএফপি থেকে বুধবার এ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা চিঠি পেয়েছি। এপ্রিলের শুরু থেকে এটা কার্যকর হওয়ার কথা।”
এই সহায়তা কমিয়ে আনার পেছনে ডব্লিউএফপির পক্ষ থেকে ‘তহবিল ঘাটতিকে’ কারণ হিসেবে তুলে ধরার কথা এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন মিজানুর রহমান।
এভাবে খাদ্য সহায়তা কমে গেলে এর সরাসরি প্রভাব রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় মানুষদের উপর পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন শরণার্থীদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশি দপ্তরের শীর্ষ এই কর্মকর্তা।
কেমন প্রভাব পড়তে যাচ্ছে, তার একটা ধারণা দিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, “খাদ্য সহায়তা কমলে রোহিঙ্গাদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য এবং ক্যাম্পের নিরাপত্তায় বিঘ্নিত হবে। রোহিঙ্গারা কাজের সন্ধানে ক্যাম্পের বাইরে চলে যেতে চাইলে সরাসরি প্রভাব পড়বে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উপর।”
ডব্লিউএফপির খাদ্য সহায়তা কমিয়ে আনার প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি মোকাবেলায় অন্যান্য মানবিক সহায়তাকারী সংস্থা ও দেশের সঙ্গে আলোচনা চালানোর কথা বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধের কারণে এমন সিদ্ধান্ত কি না, জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, এটা তারা (ডব্লিউএফপি) চিঠিতে বলেনি। তবে, যুক্তরাষ্ট্র এখানে সবচেয়ে বড় দাতা। তাদের অনুদান স্থগিতের প্রভাবতো আছেই।”
বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের উন্নয়ন অর্থায়ন ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হলেও জরুরি খাদ্য সহায়তা এর বাইরে থাকার কথা বলা হচ্ছিল।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের অগাস্টে রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২৫০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে দিয়েছে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।
গত ২৬ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রায় সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম বন্ধের যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের জীবনরক্ষাকারী খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা কার্যক্রম তার আওতায় পড়বে না।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মিজানুর রহমান বলেন, এক্ষেত্রে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা পায়নি বলে মনে হচ্ছে। এ কারণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
তিনি বলেন, সাড়ে ১২ ডলারের মধ্যে ১২ ডলার সরাসরি রোহিঙ্গাদের অ্যাকাউন্টে চলে যায়। আর ৫০ সেন্ট খরচ ‘রাইস ফর্টিফিকেশনে’।
এর আগে ২০২৩ সালের মার্চে খাদ্য সহায়তার পরিমাণ ১২ থেকে ১০ ডলার এবং তার দুই মাস পর সেখান থেকে কমিয়ে ৮ ডলার করা হয়েছিল।
এরপর ২০২৪ সালের জুনে সেখান থেকে বেড়ে আগের ১২ ডলার এবং সঙ্গে রাইস ফর্টিফিকেশনের ৫০ সেন্ট যুক্ত হওয়ার কথা বলেন মিজানুর রহমান।