এনআইডি সেবা ইসির অধীনে রাখার দাবিতে কর্মীদের অবস্থান

এনআইডি সেবা ইসির অধীনে রাখার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অবস্থান কর্মসূচির সময় কথা বলছেন সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন।
জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কক্ষের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে ১২ মার্চ মানবন্ধন ও ১৩ মার্চ থেকে কর্মবিরিতির ঘোষণা দিয়েছেন ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এক জায়গা থেকে সব সেবা দেওয়ার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের মধ্যে বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সেবা নিয়ে দুর্ভোগ-জটিলতা নিরসনে স্বতন্ত্র কমিশন করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সেই লক্ষ্যে ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন), ২০২৫’ নামে একটি অধ্যাদেশের খসড়া তৈরির কাজ চলছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ নিয়ে স্থানীয় সরকার, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মতামতও নিচ্ছে।
এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন-ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের কাছে।
এদিন দুপুরে নিজ কক্ষের সামনে অবস্থান করা কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করে সিইসি বলেন, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে, এমন কোনো বিষয় আমি শুনিনি। এমন আলাপ আলোচনা হয়েছে, হয়ত নীতিগত বিষয়ে চিন্তা চলছে। কীভাবে এটা করা হতে পারে এ নিয়ে আলোচনা চলছে।”
লিখিতভাবে সরকারের কাছে ইসির অবস্থান জানানো হবে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের যখন মিটিংয়ে ডাকা হলো তখন আমরা জানলাম (সিভিল রেজিস্ট্রেশন উদ্যোগের কথা), অফিসার গেছেন মিটিংয়ে। সরকার হয়ত চিন্তা করছে একটা জায়গা থেকে সার্ভিসটা দেবে। এনআইডি ইসির কাছে আছে, থাকবে-এ বিষয়ে কমিশন সম্পূর্ণ একমত।
“আমাদের মতামত সরকারের কাছে লিখিতভাবে জানাবো। আর্জেন্ট বেসিসে এটা জানানো হবে।”
নাসির উদ্দিন বলেন, “এনআইডি তো ভোটার রেজিস্ট্রেশনের একটা বাইপ্রোডাক্ট। ১৭ বছর ধরে ইসি কর্মকর্তারা শ্রম দিয়েছেন, সারাদেশে নেটওয়ার্ক ডেভলপ করছেন। সার্বিক বিষয়গুলো সরকার ডেফিনেটলি বিবেচনায় নেবে।
“হয়ত ইনফরমেশনের একটা গ্যাপ থাকতে পারে। কমিশনের লিখিত মতামত পাওয়ার পর নিশ্চয়ই এ গ্যাপটা থাকবে না।”
সিইসি বলেন, “এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, সবার সম্মতিতেই কাজটা করছি।…আই এম নট দ্য আলটিমেট ডিসিশন মেকার। আমি ইসিকে রিপ্রেজেন্ট করি, ইসির পক্ষে কথা বলতে পারি। সরকারের কাছে অবস্থান তৈরি করতে পারি। সরকার তো অনেক উপরের ব্যাপার। আমরা সাংবিধানিক সংস্থা।
এনআইডি সেবা ইসির অধীনে রাখার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
“আইন যদি সরকার করে ফেলে আমাদের আইন মানতে হয়। কিন্তু আইন বানানোর প্রক্রিয়ায় আমাদের মতামত জরুরিভাবে তুলে ধরবো।”
জাতীয় পরিচয়পত্র-এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে আইন করা হয়েছিল, ক্ষমতার পালাবদলের পর তা বাতিল চেয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।
তাদের দাবি মেনে আইনটি বাতিল হলে এনআইডি সেবা বরাবরের মতই নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকবে।
ওই প্রস্তাব অনুমোদনের পর সরকারকে অধ্যাদেশ জারি করে আইনটি বাতিল এবং আগের আইন বহাল করতে হবে।
এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত ১৬ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছিলেন, এনআইডি সেবা নিজেদের কাছে রাখতে নির্বাচন কমিশনের পাঠানো প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
এদিকে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থা’ নামে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গঠনের সুপারিশ করেছে সরকারের কাছে।
এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ২৬ জানুয়ারি সিইসি বলেন, “ভোটার এনআইডি কার্ড, ভোটার রেজিস্ট্রেশন যেটা উনারা বলেছেন পরবর্তী পর্যায়ে একটা আবার স্বাধীন অধিদপ্তর/পরিদপ্তরে হ্যান্ডওভার করার জন্য সাজেস্ট করছেন। ...আরেকটা কর্তৃক্ষকে দিলে আমার কি তার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে? ইটস ইমপসিবল ।”
কর্মকর্তাদের উদ্বেগ, কর্মসূচি
সিইসির কক্ষের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, “এনআইডি কাযক্রম যাতে ইসি থেকে না যায় সে বিষয়ে কমিশন সব উদ্যোগ নেবে, আমরা ইসির সাথে আছি। এনআইডি যদি ইসি থেকে চলে যায়, নির্বাচন হুমকির মুখে পড়বে। আমাদের উদ্বেগ জানিয়ে স্মারণলিপি দিয়েছি, কর্মসূচি রয়েছে।”
বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, “এনআইডি নিয়ে বারবার একেক সময় একেকরকম সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি হয়। তারা এনআইডি নিয়ে টানা হেঁচড়া করে।
“এর আগে একাধিকবার চেষ্টা হয়েছিল, মাঝে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এখন আবার নতুন কমিশন তৈরি করে তাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কোনো না কোনো উদ্দেশ্যে এগুলো করা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা অ্যাসোসিয়েশেনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।”
১৭-১৮ বছর ধরে কোনো সমস্যা হয়নি তুলে ধরে ইসির এ কর্মকর্তা বলেন, “আজকে এমন কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে আমরা বিশ্বাস করি, এনআইডি ইসি থেকে অন্য কোথাও যাবে।
“আমরা কমিশনকে জানিয়েছি, সময় দিয়েছি আগামী বুধবারের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রত্যাশা করছি। তা না হলে ১৩ মার্চ ইসি সচিবালয়সহ সারাদেশে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেলা ১১ থেকে ১টা পর্যন্ত মানবন্ধন করবো। তারপরও দাবি পূরণ না হলে কর্মবিরতিসহ আরো কঠোর কর্মসূচিতে যাবো।”