রোজা শুরু না হতেই সবজির দাম দ্বিগুণ, বেড়েছে মাছ-মাংসের মূল্য

রমজান মাসের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বেড়েছে ভিড়, আর সেই সুযোগে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়ে গেছে বেশিরভাগ সবজির দাম। মাছ ও মাংসের মূল্যও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যদিও আলু-পেঁয়াজ ও মুদি সামগ্রীর দামে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি।
রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর কাঁচাবাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দুই দিন আগেও যে লম্বা বেগুন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, তা আজকে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শসার দাম ৪০-৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০-১০০ টাকায় পৌঁছেছে। লেবুর হালির দামও ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০-৮০ টাকা হয়েছে।
অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। টক টমেটো ৩০-৪০ টাকা, দেশি গাজর ৪০ টাকা, শিম ৫০ টাকা, সাদা ও কালো গোল বেগুন ৭০-৮০ টাকা, উচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, করল্লা ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ১২০ টাকা, পটল ১৪০-১৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ফুলকপি ৩০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দুই দিনের ব্যবধানে বেশিরভাগ সবজির দামই বেড়েছে ১০-৬০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতাদের দাবি, রমজান আসার কারণে নয়, বরং মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়াতেই এই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। তবে ক্রেতারা এই যুক্তি মানতে নারাজ, তারা বলছেন, রমজানকে কেন্দ্র করেই দাম বাড়ানো হচ্ছে।
এদিকে, আলু-পেঁয়াজের দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। দেশি পেঁয়াজ ৪০-৫০ টাকা, নতুন সাদা ও লাল আলু ২০-২৫ টাকা, বগুড়ার আলু ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় আদার দাম ২০ টাকা কমে ১২০ টাকায় নেমে এসেছে।
মাংসের বাজারেও অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। গরুর মাংস ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির দাম ৫০ টাকা বেড়ে ৬৫০ টাকায় পৌঁছেছে। ব্রয়লার মুরগি ২০৩-২১০ টাকা, কক মুরগি ২৭৩-২৯৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০-২৯৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারেও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ দুই দিন আগেও ১০০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হলেও, এখন ১৬০০ টাকায় পৌঁছেছে। বড় ইলিশ ২৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, রুই মাছ ৪০০-৬০০, কাতল মাছ ৪০০-৭০০, কালিবাউশ ৬০০-৭০০, চিংড়ি মাছ ৮০০-১৬০০, পাবদা ৪০০-৬০০, শিং ৪০০-১২০০, বোয়াল ৬০০-১২০০, শোল ৭০০-৯০০, চিতল ৭০০-১০০০, রূপচাঁদা ৮০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানের পণ্যের দামে এখনও কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। ছোলা ১২০, মসুর ডাল ১৩৫, বুটের বেসন ১৪০, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫, খোলা সয়াবিন ১৫৭, চিনি ১২৫, ময়দা ১৫০, আটা ১১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সয়াবিন তেলের সংকট এখনও কাটেনি, যার ফলে কিছু দোকানে তেল কিনতে হলে অন্য পণ্যও কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।
ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশে রমজানে পণ্যের দাম কমানো হয়, কিন্তু বাংলাদেশে উল্টো বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, চাহিদা বৃদ্ধির কারণেই এই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, এটি একটি পরিকল্পিত মূল্যবৃদ্ধির কৌশল, যা সাধারণ জনগণের জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।