ঝিনাইদহে তিনজনকে গুলি করে হত্যা, পুলিশ এখনো ক্লু পায়নি
ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলায় তিনজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এখনো কোনো ‘ক্লু’ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা করা হয়নি।শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া।
তিনি জানান, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হচ্ছেন, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের রাহেনউদ্দিনের ছেলে আব্দুল হানিফ (৫৫), হানিফের শ্যালক একই উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের লিটন হোসেন (৩৪) এবং কুষ্টিয়ার ইবি থানাধীন পিয়ারপুর গ্রামের খায়রুল ইসলামের ছেলে রাইসুল ইসলাম (৩০)।এর মধ্যে হানিফ ও লিটনের মরদেহের পাশে দুটি মোটরসাইকেল পাওয়া যায়, আর রাইসুলের মরদেহ ছিল সড়কের পাশের ধানক্ষেতে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান বলেন, এখন পর্যন্ত কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বা কী কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, ঘটনার পরপরই সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপে একটি বার্তা পাঠিয়ে দায় স্বীকার করা হয়, যা গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া, তিনজনকে কীভাবে ঘটনাস্থলে আনা হলো তাও তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে শ্মশানঘাট এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। তবে ভয়ে কেউ ঘটনাস্থলে যাননি। পরে পুলিশ গিয়ে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে।
নিহতদের লাশ থানায় নেওয়ার পর, শনিবার সকালে সেখানকার দৃশ্য দেখতে ভিড় করেন স্থানীয়রা।নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, একসময় হরিণাকুন্ডু-শৈলকূপা সীমান্ত এলাকা চরমপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি ও গণবাহিনীর আধিপত্য ছিল এলাকাটিতে। ২০০৩ সালে পার্শ্ববর্তী ত্রিবেনী গ্রামে একইভাবে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপরও এ এলাকায় একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
হত্যাকাণ্ডের পর ঝিনাইদহে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে একটি বার্তা পাঠানো হয়, যেখানে কুষ্টিয়া এলাকার জাসদ গণবাহিনীর নেতা ‘কালুর’ নাম উল্লেখ করে হত্যার দায় স্বীকার করা হয়। বার্তায় লেখা ছিল:
“ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বাশির উদ্দেশ্যে জানানো যাইতেছে যে, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা অসংখ্য খুন, গুম, দখলদারি, ডাকাতি, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হরিণাকুন্ডু নিবাসী মো. হানিফ তার দুই সহযোগীসহ জাসদ গণবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন। অত্র অঞ্চলের হানিফের সহযোগীদের শুধরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো, অন্যথায় একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।” শৈলকূপা থানার ওসি মাসুম খান জানান, এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
নিহত হানিফের ছোট ভাই মাজেদুল ইসলাম জানান, ময়নাতদন্ত শেষে রোববার দাফন সম্পন্ন হবে। এরপর পরিবারের সদস্যরা আলোচনা করে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।তিনি দাবি করেন, তার ভাই চরমপন্থি কোনো দলের সঙ্গে এখন আর জড়িত ছিলেন না। হানিফ হরিণাকুন্ডু উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সহসভাপতি ছিলেন।