আমি প্রদেশের পক্ষে না, বললেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সঙ্গে এক যৌথ সংলাপে বক্তব্য রাখেন কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ।
পুরনো চার জেলাকে প্রদেশ করার ও জেলা পরিষদ বিলুপ্তের যে প্রস্তাব জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন দিয়েছে তা সমর্থন করেন না বলে তুলে ধরেছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেন, “আমি প্রদেশ করার পক্ষে না, জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করা যাবে না। সেটিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সঙ্গে এক যৌথ সংলাপে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।
‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জন-আকাঙ্খার আলোকে স্থানীয় সরকার’ শীর্ষক এই জাতীয় সংলাপের আয়োজক ছিল গভর্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, “জেলা পরিষদ এখনকার মত করে থাকবে না। সেখানে জনঅংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে।”
গণআন্দোলেনের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম ধাপে রাষ্ট্রের ছয় খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।
এ লক্ষ্যে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে প্রাদেশিক সরকার, জেলা পরিষদ বিলুপ্তসহ বিভিন্ন প্রস্তাব রয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন উপজেলা পর্যায়ে নিম্ন আদালত রাখার প্রস্তাব দিয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনসহ পাঁচটি কমিশন করা হয়েছে, যারা এখনও প্রতিবেদন দেয়নি।
স্থানীয় সরকার সংস্কার বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ে সংলাপে কমিশনের প্রধান বলেন, “নিম্ন আদালত থাকবে উপজেলা পর্যন্ত যাবে। এটা বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবেও রয়েছে। ফলে এটা গণদাবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
“এর মাঝমাঝি একটা কোর্ট থাকবে। বিচার বিভাগ উপজেলা পর্যন্ত এবং সেখানে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলাগুলো আমলে নেওয়া হবে।”
দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য সংস্কার কমিশন ২১০টি সংস্কার প্রস্তাব দেবে বলেছেন তোফায়েল আহমেদ।
দেশের স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নানা সংকট তুলে ধরে তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা অনেক সময় অনিয়মে জড়ান। তার চেয়ারম্যান বা মেম্বার একটা লাইসেন্স থাকে, সেটা দিয়ে বালু, পাথর খেয়ে ফেলেন তিনি।
“স্থানীয় সরকারে সংকটের প্রথম কারণ দুর্নীতি, যে যেখানে আছে, সেখানে দুর্নীতি করছে। এগুলো থামাতে হবে। তরুণ ও শিক্ষিতদের নির্বাচিত করতে হবে।”
সংলাপে গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম বেশ কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরে। এর মধ্যে রয়েছে- স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও দায়িত্ব বিভাজন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরে সরাসরি ও নির্দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন এবং কর-রাজস্ব ব্যবস্থার স্থানীয়করণ।
পাশাপাশি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত, স্থানীয় উন্নয়নের সকল স্তরে জনঅংশগ্রহণ ও তৃণমূলের মানুষের অন্তর্ভুক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়।
গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম বলেছে, স্থানীয় পর্যায়ের জনগণের দাবি তুলে ধরতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৫০টির অধিক নাগরিক সংগঠনের মতামত গ্রহণ করেছে তারা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনায় পাঁচটি সংলাপ আয়োজনের কথা বলেছে সংগঠনটি।
এসব সংলাপে প্রায় চার শতাধিক অংশগ্রহণকারী তাদের মতামত ও সুপারিশ দিয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক, পাশাপাশি জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, প্রতিবন্ধকতা ও সম্প্রদায়গতভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ৭৭ জন প্রতিনিধি ছিলেন বলে তুলে ধরে ফোরাম।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমা এবং গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের ফ্যাসিলিটেটর অনিরুদ্ধ রায়।
সেখানে সভাপতিত্ব করেন গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়কারী মহসিন আলী। বক্তব্য রাখেন- ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক, কেয়ার বাংলাদেশের আমানুর রহমান ও অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম।