কুয়েটে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পর পাঁচ দফা দাবিতে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিও রয়েছে এই পাঁচ দফার মধ্যে।
মঙ্গলবার রাতে ক্যাম্পাসের মেডিকেল সেন্টারে প্রেস ব্রিফিং করে এসব দাবি তুলে ধরেন একদল শিক্ষার্থী। তবে তারা তাদের নাম বলতে চাননি।
তারা অভিযোগ করে ছাত্রদল ও স্থানীয় বিএনপি নেতা–কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুপুর থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়; তাতে আহত হন অর্ধ শতাধিক।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, সকালে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা প্রচার কার্যক্রম চালায়। এর প্রতিবাদে একদল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। তারা ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই’ বলে স্লোগান দেন।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে পৌঁছালে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়।
এ সময় রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।
পরে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।আহতদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েট মেডিকেল সেন্টারসহ আশপাশের বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
রাতে ক্যাম্পাসের মেডিকেল সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ে আসেন একদল শিক্ষার্থী। হামলার জন্য ছাত্রদলকে দায়ী করে তারা পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন।
# বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অধীন কেউ কোনো রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকতে পারবেন না- এই মর্মে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে এবং এর ব্যতয় ঘটলে শিক্ষক–কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আজীবন বহিষ্কার এবং শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিলের বিষয়টি স্পষ্টভাবে অধ্যাদেশে লেখা থাকতে হবে।
# মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত শিক্ষার্থী এবং তাদের প্রশ্রয়দাতা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হত্যাচেষ্টা ও নাশকতার মামলা করতে হবে এবং জড়িত সবাইকে বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। জড়িতদের তালিকা শিক্ষার্থীরাই দেবে।
# শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বাইরে সামরিক বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করতে হবে।
# হামলার ঘটনায় আহত সবার চিকিৎসা ব্যয় প্রশাসন থেকে বহন করতে হবে। আহতদের তালিকা শিক্ষার্থীরা দেবে।
# এসব দাবি পূরণ করে ঘটনার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা এবং পদত্যাগ করতে হবে।
এসব দাবি পূরণের জন্য বুধবার বেলা ১টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয় প্রেস ব্রিফিংয়ে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস- পরীক্ষাসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করার কথা বলা হয়। তবে কোনোভাবেই হল বন্ধ না করতে কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ার করেন শিক্ষার্থীরা।
গত ১১ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে কিছু গোষ্ঠী তা চালু করার চেষ্টা করছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
মঙ্গলবার সংঘর্ষের পর কুয়েট ছাত্রদলের কয়েকজন দাবি করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ছাত্রশিবিরের অংশ এবং পতিত সরকারের ছাত্রসংগঠনের পক্ষের দু-একজন মিলে ক্যাম্পাস থেকে এবং ক্যাম্পাসের আশপাশে ছাত্রদলের রাজনীতি বাধাগ্রস্ত করতে চায়। এর জের ধরেই ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে তাদের অভিযোগ।
খুলনা বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ছাত্রশিবির খুলনাকে উত্তাপ্ত করার জন্য ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের অতর্কিত হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের মারাত্মক আহত করেছে। ছাত্রশিবির নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার না করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যানারে তারা নগরীতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, যা মোটেও সর্মথনযোগ্য নয়। ছাত্রশিবির শান্তিপূর্ণ খুলনাকে অশান্ত করতে চায়। অবিলম্বে হামলাকারী শিবির ক্যাডারদের গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রশাসন দায়ী থাকবে।”
অন্যদিকে খুলনা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন বলেন, “কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছে বলে শুনেছি। আমরা হামলার নিন্দা ও জড়িতদের বিচার চাই।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ফেইসবুকে পোস্টে লেখেন, “কুয়েটে ছাত্রদল নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ স্টাইলে যে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদল নিজেদের রাজনৈতিক কবর রচনার পথেই অগ্রসর হলো।”