তিস্তাপাড়ের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে হবে মহাপরিকল্পনা: রিজওয়ানা

তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সময় দুই বছর বাড়ানোর কথা জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পাওয়ার চায়না ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারকে মহাপরিকল্পনা দেবে।
তবে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তারা একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দেবে সরকারের কাছে।
মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্ম অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, "জনসম্মুখে তথ্য দেওয়া হয় না বলে মহাপরিকল্পনার ব্যাপারে কতগুলো ভ্রান্ত ধারণার ভিত্তি তৈরি হয়। মহাপরিকল্পনাইতো নেই, বাস্তবায়ন হবে কোত্থেকে। পরিকল্পনাতো করতে হবে।"
উপদেষ্টা বলেন, “চায়নিজ একটি গ্রুপ পরিকল্পনা জমা দিয়েছিলো । যেটা ফিজিবল না, টেকসই না। তাদের সাথে (চায়না পাওয়ার) আলাপ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সেই পরিকল্পনা নতুন করে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
আন্তঃসীমান্ত নদী তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের টানাপড়েন চলছে বহু বছর ধরে।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে দুই দেশের পানি সম্পদ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে দুইপক্ষ একমত হয়েছিল।
মনমোহন সিংয়ের সফরেই বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়।
নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশার কথা শোনা গেলেও মমতার মত বদলায়নি।
ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি আটকে থাকার মধ্যে ‘তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রজেক্ট’ হাতে নেয় সরকার।
এর আওতায় তিস্তা প্রকল্পে নদীটির কূল ব্যবস্থাপনায় অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াও বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রীষ্মকালে পানি সংকট দূর করতে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে বলে সেসময় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে।
চীনা কোম্পানি ‘পাওয়ার-চায়না’ বাংলাদেশের সব বড় নদ-নদীকে অন্তর্ভুক্ত করে ওই প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ পায়। তবে ভারতের আপত্তিতে চীনা সহায়তায় তিস্তা প্রকল্পের বাস্তবায়ন আটকে থাকে।
বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর এখন পরিস্থিতি বদলেছে। তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সোমবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি চলছে উত্তরের তিস্তাপাড়ের পাঁচ জেলায়।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, "২০১৬ সালে যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে মহাপরিকল্পনা অনেক আগেই দেওয়ার কথা ছিল। এখন আরো দুই বছর সময় বাড়ানো হয়েছে।
"কিন্তু আমরা বললাম এই পরিকল্পনায় কী থাকবে, কী থাকবে না সেটা তিস্তা এলাকার মানুষের মতামত শুনে তারপর করতে হবে। মতামত শোনার প্রক্রিয়া করবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পিডব্লিউডি। প্রতিটি গণশুনানিতে উপস্থিত থাকবে পাওয়ার চায়না।"
উপদেষ্টা বলেন, “তারা (পাওয়ার চায়না) যখন মহাপরিকল্পনা রিভাইজ করে দেবে, তাতে যেন জনমতের প্রতিফলন ঘটে।
"দুই বছর সময় দিয়েছি, তারা পরিকল্পনা করে দেবে। এরপর প্ল্যানিং কমিশন অ্যাপ্রুভ করবে, তারপর চীন সরকারের কাছে যাবে। এখন জোর দিচ্ছি পরিকল্পনাটা যেন অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে দেয়।”