এখন আদানির বিদ্যুতের পুরো সরবরাহ চাইছে বাংলাদেশ
![এখন আদানির বিদ্যুতের পুরো সরবরাহ চাইছে বাংলাদেশ এখন আদানির বিদ্যুতের পুরো সরবরাহ চাইছে বাংলাদেশ](https://www.onp24.com/media/imgAll/2023June/adani-2502110858.jpg)
গ্রীষ্ম শুরুর আগে ভারতের আদানি পাওয়ারের ঝাড়খণ্ড কেন্দ্রের সক্ষমতার পুরো ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎই বাংলাদেশ চাইছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স।
শীত মৌসুমে চাহিদা কম থাকা ও বকেয়া পরিশোধ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় ধরে চুক্তির অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল আদানি পাওয়ার।
তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর চুক্তি করে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ। ২৫ বছর মেয়াদী ওই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিতে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে আদানি পাওয়ার।
১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ওই কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল আদানি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮৫ কোটি ডলারের বকেয়া আদায়ে গত ৩১ অক্টোবর বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক করে দেয় এই ভারতীয় কোম্পানি।
রয়টার্স লিখেছে, ১ নভেম্বর একটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হলে কেন্দ্রের সক্ষমতার ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। পরে বাংলাদেশও আদানিকে অর্ধেক বিদ্যুৎই সরবরাহ করতে বলে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বলছে, তারা প্রতি মাসে সাড়ে ৮ কোটি ডলার বকেয়া পরিশোধ করছে। এখন আদানিকে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ফের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
বিপিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রয়টার্স বলেছেন, কারিগরি জটিলতায় সোমবার দ্বিতীয় ইউনিট চালু করতে পারেনি আদানি।
“আমাদের চাহিদা অনুযায়ী আজ তারা দ্বিতীয় ইউনিট চালু করার চেষ্টা করেছে; কিন্তু হাই ভাইব্রেশনের কারণে তা সম্ভব হয়নি।”
রেজাউল করিম বলেন, “এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে আমরা সাড়ে আট কোটি ডলার করে পরিশোধ করছি। আমরা আরও বেশি পরিশোধের চেষ্টা করছি এবং বকেয়া কমানোই আমাদের লক্ষ্য। এখন আদানির সঙ্গে বড় কোনো ঝামেলা নেই।”
রয়টার্স বলছে, এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য আদানির এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল তারা, কিন্তু তিনি তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেননি।
গত ডিসেম্বরে আদানি সূত্র রয়টার্সকে বলেছিল, পিডিবির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০ কোটি ডলারের মত। তখন রেজাউল করিম বলেছিলেন, তাদের বকেয়ার পরিমাণ ৬৫ কোটি ডলারের মত।
২০১৭ সালের চুক্তিতে গড়ে দুটি সূচকের ওপর ভর করে বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণের যে ফর্মুলা করা হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেনার সারসংক্ষেপ অনুসারে, গড্ডা থেকে সরবারাহ করা বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের যে দর ধরা হয় তা ভারত থেকে বাংলাদেশে বেচা সব বিদ্যুতের গড়ের চেয়ে ৫৫% বেশি।
আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি ওই চুক্তি পুনর্মূল্যায়নে ইতোমধ্যে উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশের হাই কোর্ট।
ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কর ছাড় সুবিধার কথা গোপন করে আদানি পাওয়ার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে গত বছর অভিযোগ করেছিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। তখন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা চুক্তি পর্যালোচনার কথা বলেছিলেন।
রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে আদানি পাওয়ারের একজন মুখপাত্র তখন বলেছিলেন, তারা চুক্তির সব বাধ্যবাধকতা ‘রক্ষা’ করেছেন এবং ঢাকা চুক্তি পর্যালোচনা করছে এমন কোনো ইঙ্গিত তারা পাননি।
আদানির সঙ্গে যেসব মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল তা এখন মিটেছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তর রয়টার্সকে দেননি পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম।
গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ২৬ কোটি ডলার ঘুষ দেওয়ার মামলায় আদানি ও তার সাত নির্বাহীকে অভিযুক্ত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে তখন উড়িয়ে দেয় আদানি।
শেখ হাসিনার আমলে স্বাক্ষরিত বড় বড় জ্বালানি চুক্তি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গত সেপ্টেম্বরে বিশেষজ্ঞদের প্যানেল গঠন করে ইউনূস সরকার।