জানুয়ারি মাসে ৬৫৯ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬৭৭
![জানুয়ারি মাসে ৬৫৯ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬৭৭ জানুয়ারি মাসে ৬৫৯ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬৭৭](https://www.onp24.com/media/imgAll/2023June/Accident-3-2502101018.jpg)
জানুয়ারি মাসে ৬৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৭৭ জন নিহত ও ১২৭১ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে রেলপথে ৫৭টি দুর্ঘটনায় ৫৯ জন নিহত ও নৌ-পথে ১৬ টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন।
আজ সোমবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
এছাড়া জানুয়ারি মাসে ২৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩০১ জন নিহত ও ২৩৯ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গণপরিবহন ও যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি।
সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য ৯৬টি জাতীয়, আঞ্চলিক, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদন।
এতে দেখা যায়, বিদায়ী জানুয়ারি মাসে সর্বমোট সড়ক, রেল ও নৌপথে ৭৩২টি দুর্ঘটনায় ৭৫৪ জন নিহত ও ১৩০৩ জন আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে মোট সংগঠিত দুর্ঘটনার ৩৭ দশমিক ৮০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘঠিত হয়েছে। এছাড়াও দেশে সংঘঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১ দশমিক ৪ শতাংশ
চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০ দমমিক ৬৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘঠিত হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণসমূহ-
১. বেপরোয়া গতি ২. বিপজ্জনক ওভারটেকিং ৩. সড়কের নির্মাণ ত্রুটি ৪. ফিটনেস বিহীন যানবাহন ৫. চালক, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা ৬. চালকের অদক্ষতা ও ট্রাফিক আইন সংক্রান্ত অজ্ঞতা ৭. পরিবহন চালক ও মালিকের বেপরোয়া মনোভাব ৮. চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার ৯. মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো ১০. অরক্ষিত রেলক্রসিং ১১. রাস্তার ওপর হাট-বাজার, ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা ১২. ট্রাফিক আইন প্রয়োগে দুর্নীতি ১৩. ট্রাফিক আইন প্রয়োগে দুর্বলতা ১৪. ট্রাফিক আইন অমান্য করা ১৫. রোড মার্কিং না থাকা ১৬. সড়কে চাঁদাবাজি ১৭. চালকের নিয়োগ ও কর্মঘন্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা ১৮. সড়কে আলোকসজ্জা না থাকা ১৯. রোড ডিভাইডার পর্যাপ্ত উঁচু না থাকা ২০. সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর দ্বায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা না থাকা ২১. দেশব্যাপী নিরাপদ, আধুনিক ও স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ভয়াবহভাবে বাড়ছে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সুপারিশমালা-
১. দুর্ঘটনায় মানুষের জীবন রক্ষায় সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অর্šত্মভুক্ত করা ২. দ্রুত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করা ৩. সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে সড়ক নিরাপত্তা উইং চালু করা ৪. সড়ক নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়নে নানামুখী কার্যক্রম শুরু করা ৫. দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা, জেব্রা ক্রসিং অংকন ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা ৬. গণপরিবহন চালকদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা ৭. সড়ক পরিবহন সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা ৮. গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা ৯. সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিলে আবেদনের সময়সীমা ৬ মাস বৃদ্ধি করা ১০. স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দেশব্যাপী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া ১১. ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রাফিক ট্রেনিং একাডেমী গড়ে তোলা ১২. সড়কের মিডিয়ানে উল্টো পথের আলো ও পথচারীর পারাপার রোধে মহাসড়কের রোড ডিভাইডার পর্যাপ্ত উঁচু করা ১৩. গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ ও সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণসহ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে ভুক্তভোগীদের পক্ষে যাত্রী সাধারণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।