তেল উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ: স্থবির বাঘাবাড়ী অয়েল ডিপো
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের পেট্রল পাম্প মালিকদের জ্বালানি তেল উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ রাখার ঘোষণায় স্থবির হয়ে পড়েছে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের অয়েল ডিপো।
বুধবার সকাল থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ রাখা হয়েছে।
বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের পদ্মা, যমুনা ও মেঘনার ওয়েল ডিপো থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানি তেল সরবরাহ হয়ে থাকে। তেল পরিবহন বন্ধ থাকায় ট্যাংকলরি শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।
উত্তরবঙ্গ ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, “সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিজেদের জায়গা দাবি করে বিনা নোটিসে উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি পেট্রোল পাম্প উচ্ছেদ করেছে। এ নিয়ে প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেও সামাধান হয়নি। এ বিষয়ে হাইকোর্টে মামলাও চলছে। তবুও সড়ক ও জনপথ বিভাগ উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।”
তিনি বলেন, “এ পরিস্থিতিতে তেল পাম্প মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাধ্য হয়ে এই যৌথ কর্মসূচি দিয়েছে। দাবি না মানা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলমান থাকবে।”
‘বিনা নোটিসে’ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য উত্তরবঙ্গের সব পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় রাজশাহী বিভাগীয় পেট্রোল পাম্প মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এ সময় বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের ডিপো থেকে সব ধরনের জ্বালানি তেল উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ রাখার কথা জানায় ঐক্য পরিষদ।
এদিকে পাম্পগুলো তেল বিক্রি বন্ধ রাখায় ভোগান্তিতে পড়ছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। তেল না পেয়ে পাম্পগুলো থেকে তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। বোরো আবাদে ডিজেল সংকটের আশঙ্কাও করছেন কৃষকরা।
সোহেল রানা নামের স্থানীয় এক সংবাদ কর্মী বলছিলেন, “জরুরি প্রয়োজনে সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে সিরাজগঞ্জ শহর থেকে তাড়াশ উপজেলায় রওনা হয়েছি। তেলের পাম্প বন্ধ থাকায় একটি দোকান থেকে পেট্রোল কিনতে হয়েছে। খোলা বাজারের পেট্রোল সাধারণত ভেজাল হয়। ভালভাবে গন্তব্যে পৌছতে পারব কি-না শঙ্কায় রয়েছি।”
সিরাজগঞ্জ মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান লিটন বলেন, “বাসের ট্যাংকিতে মূলত আগের দিন ডিজেল তুলে রাখা হয়। এখন যা আছে, তা দিয়ে বুধবার বিকাল পর্যন্ত গাড়ি চলবে। এরপর ডিজেল তুলতে না পারলে বৃহস্পতিবার থেকে বাস বন্ধ রাখতে হবে।”
তেল পাম্প মালিকদের সমস্যা সমাধান করে দ্রুত তেল পাম্পগুলো খুলে দেওয়ায় দাবি জানান তিনি।
উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা মধ্যপাড়া ভরমহনী গ্রামের সেচ পাম্প মালিক কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “বোরো আবাদ চলছে। এখন ক্ষেতে পানি সেচ দেওয়া জরুরি। এখন ডিজেলের অভাবে সেচ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষেত শুকিয়ে যেতে পারে। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কাও রয়েছে।”
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, “বুধবার বেলা ২টায় বগুড়ায় উত্তরাঞ্চলের তেল পাম্প মালিক ও সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। এছাড়া বেলা ৩টায় সিরাজগঞ্জের তেল পাম্প মালিক ও ট্যাংকলরি শ্রমিকদের সঙ্গে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সভা ডাকা হয়েছে। আশা করছি, আজকের মধ্যে বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।”