বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মাঘ ২৩ ১৪৩১, ০৬ শা'বান ১৪৪৬

জাতীয়

পাবনায় শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা: ফাঁসির ৯ আসামিসহ সবাই খালাস

 প্রকাশিত: ১৪:১৩, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পাবনায় শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা: ফাঁসির ৯ আসামিসহ সবাই খালাস

তিন দশক আগে পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে বোমা হামলা ও গুলির ঘটনায় জজ আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বিএনপির ৯ নেতাকর্মীসহ দণ্ডিত ৪৭ আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট।

ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলাম ও বিচারপতি হামিদুর রহমানের বেঞ্চ বুধবার এ রায় ঘোষণা করে।

আদালতে আসামিদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান খান, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রথম সরকারের সময় ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রেন মার্চ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর অংশ হিসেবে খুলনা থেকে ট্রেনে করে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী স্টেশনে তার যাত্রাবিরতি ও পথসভা করার কথা ছিল।

ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে পৌঁছালে শেখ হাসিনার বগি লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোড়া হয়। তবে ওই ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

হামলার ঘটনায় রেল পুলিশের ওসি নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাত জনের নাম উল্লখ করে এবং আরও শতাধিক ব্যক্তিকে ‘অজ্ঞাত পরিচয়’ আসামি হিসেবে দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন।

কিন্তু তখনকার বিএনপি সরকারের সময়ে এ মামলার তদন্ত আটকে থাকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে পুলিশকে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

তদন্ত শেষে ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে আসামি করে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। পরে অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরু করে আদালত।

২০১৯ সালের ৩ জুলাই এ মামলার রায় ঘোষণা করেন পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোস্তম আলী।

এ মামলার আসামি বিএনপির ৯ নেতাকর্মীকে তিনি মৃত্যুদণ্ড দেন। এছাড়া ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ওই রায়ে সর্বোচ্চ সাজার রায় পান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোকলেছুর রহমান, পাবনা জেলা বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক একেএম আকতারুজ্জামান আকতার, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, ঈশ্বরদী পৌর যুবদলের সভাপতি মোস্তফা নূরে আলম শ্যামল, স্থানীয় বিএনপি নেতা মাহবুবুল রহমান পলাশ, রেজাউল করিম ওরফে শাহিন, শামছুল আলম, আজিজুর রহমান ভিপি শাহীন ও শহীদুল ইসলাম অটল।

যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ইসলাম হোসেন জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, আল আমিন, শিমু, আনিস শেখন, খোকন, নুরুল ইসলাম, আক্কেল আলী, সেলিম আহমেদ, মামুনুর রহমান, রবি, মামুন, তুহিন, এনাম, কল্লোল, কালা বাবু, লিটন, আবদুল্লাহ আল মামনু রিপন, লাইজু, আব্দুল জব্বার, আবুল কালাম, আব্দুল হাকিম টেনু, আলমগীর হোসেন, পায়েল ও পলাশকে।

এছাড়া আসামি তুহিন বিন ছিদ্দিক, দুলাল সরদার, ফজলুর রহমান, আব্দুল বারিক, আনোয়ার হোসেন জনি, রস্তম, মওলা, জামরুল, রাজু, বাবলু, বরকত, মুক্তা ও মুকুলকে দেওয়া হয় ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড।

ফৌজদারি কোনো মামলায় মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাই কোর্টের অনুমোদন লাগে। সে অনুযায়ী বিচারিক আদালতের ওই রায়সহ যাবতীয় নথিপত্র ২০১৯ সালে হাই কোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছায়। পাশাপাশি দণ্ডিত আসামিরা হাই কোর্টে আপিল করেন।

গত ৩০ জানুয়ারি আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে বুধবার সবাইকে খালাস দেওয়া হল।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যা বিদ্বেষপূর্ণ বিচার। তদন্ত ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ দায়সারা গোছের ও কাল্পনিক। ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা মেটানো ও কাউকে খুশি করার জন্য ওই রায় দেওয়া হয়েছিল।”

জজ আদালতের রায়ে দণ্ডিত ৪৭ জনের মধ্যে দুইজন মারা গেছেন এরই মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জন ছাড়া বাকিরা গত ৫ অগাস্টের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।