এবার ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের তদন্তের মুখে টিউলিপ
সমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্যের আর্থিক সেবাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানো টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে এবার তদন্ত শুরু করেছে ব্রিটেনের অপরাধ তদন্ত বিষয়ক জাতীয় সংস্থা- এনসিএ।
গেল মাসে ঢাকায় দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এনসিএ এই তদন্ত শুরু করে বলে শনিবার ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
ডেইলি মেইল বলছে, গেল মাসের বৈঠকে দুদক কর্মকর্তারা ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন যে তারা টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে ‘নতুন প্রমাণ’ পেয়েছেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তিতে টিউলিপ এই দুর্নীতি করেছেন বলে ভাষ্য দুদক কর্মকর্তাদের।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক পত্রিকাটি বলছে, ব্রিটিশ সরকার এখন চাইলে টিউলিপের ব্যাংক হিসাব ও ইমেইল চালাচালি খতিয়ে দেখার পাশপাশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে তলবও করতে পারে।
টিউলিপ ও শেখ রেহানাসহ তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ৩৯০ কোটি পাউন্ড আত্মসাৎ করেছেন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসাটম এই বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করছে, যার ৯০ শতাংশ ঋণই এসেছে ক্রেমলিনের কাছ থেকে।
দুদক কর্মকর্তাদের বরাতে ডেইলি মেইল বলছে, টিউলিপকে বিচারের আওতায় আনতে ঢাকাকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন এনসিএ কর্মকর্তারা। তারা যুক্তরাজ্যে তদন্ত চালিয়ে আন্তর্জাতিক একটা চুক্তির মাধ্যমে এই সহযোগিতা দিতে চান।
যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী, কোনো ব্রিটিশ নাগরিকের বিরুদ্ধে দেশের বাইরে থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের বরাতে ডেইলি মেইল বলছে, এনসিএর অনুরোধে ঢাকায় গেল মাসের বৈঠকটি আয়োজন করে বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাই কমিশনার।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটা ছিল এনসিএ কর্মকর্তাদের দ্বিতীয় ঢাকা সফর।
ডেইলি মেইল বলছে, টিউলিপ সিদ্দিক যাকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে তুলে ধরতেন, সেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। বছরে প্রায় ১৩০০ কোটি পাউন্ড পাচার করার অভিযোগও আছে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে।
এনসিএ কর্মকর্তারা প্রথমবার ঢাকা সফর করেন গত অক্টোবরে। সেবার তারা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যের মত দেশে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে ঢাকাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
ওই বৈঠকে টিউলিপের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি প্রশ্নও করেন এনসিএ কর্মকর্তারা। বৈঠকের কয়েক দিন পর অভিযোগ ওঠে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক আবাসন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার একটি ফ্লাট উপহার নিয়েছেন টিউলিপ।
টিউলিপের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
>> রূপপুর প্রকল্পে ৫ বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধানে শেখ হাসিনার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নাম এসেছে টিউলিপের।
>> রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৩ সালে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে মধ্যস্থতা করেছিলেন এবং বাজারদরের চেয়ে বেশি খরচের ওই চুক্তির মাধ্যমে তিনি অর্থ ‘আত্মসাৎ’ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
>> টিউলিপ নিজে লন্ডনের ‘কিংস ক্রস’ এলাকায় একটি ফ্ল্যাট উপহার পেয়েছেন আবদুল মোতালিফ নামের এক আবাসন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে, যার বর্তমান মূল্য ৭ লাখ পাউন্ড। মোতালিফের সঙ্গেও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের যোগসূত্র থাকার খবর এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে।
>> লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এলাকায় টিউলিপ একটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করতেন, যেটা তার ছোট বোন আজমিনাকে ‘উপহার’ দিয়েছিলেন মঈন গণি নামের এক আইনজীবী। সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনজীবী মঈন শেখ হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছবিও আছে।
তবে টিউলিপের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রতি তার সমর্থনের সঙ্গে এসব সম্পত্তির যোগসূত্র থাকার ধারণা ‘একেবারেই ভুল'।
>> ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে’ ঢাকার পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের তিনটি মামলাতেও দুদক আসামি করেছে টিউলিপকে। তার মা শেখ রেহানা, ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে এসব মামলা করা হয়েছে, যেখানে শেখ হাসিনাও আসামি।