ফ্যাসিবাদের বিচার দেশের মাটিতেই হবে : ডা. শফিকুর রহমান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ড. শফিকুর রহমান আজ সুনামগঞ্জে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। ছবি: বাসস
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গুম, খুন, হত্যাসহ ফ্যাসিবাদের বিচার দেশের মাটিতেই হবে।
আজ সুনামগঞ্জ শহরের সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (বালুর মাঠ) জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান এ কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেছেন, আগষ্টের ৩-৪ তারিখ সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। যাদের নাম পরিচয় এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। এখনও হাসপাতালে ২২২ জন পঙ্গুত্ব বরণকারী, ৭শ জন দুচোখ হারা, একচোখ হারানো আরও ৫শ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, গুম খুন হত্যাসহ ফ্যাসিবাদের বিচার দেশের মাটিতেই হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের একটাই উদ্দেশ্য একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করা। এ কাজের জন্য জামায়াত নেতাকর্মীদের উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে হবে। জামায়াতকে দেশ গড়ার দায়িত্ব দিলে একটি বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র উপহার দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। তবে জাতিকে কলংকমুক্ত করতে সকল গুম, খুনের বিচার হতে হবে। তিনি জামায়াত নেতা কর্মীদেরকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানান।
জামায়াত আমির বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে আমাদের সবগুলো অফিস সিলগালা করে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুম, খুন, নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের নেতাদেরকে বিচারের নামে ফাঁসিতে ঝঁলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের প্রতি প্রতিশোধে বিশ্বাসী নই। তবে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের আওতায় আনা দরকার।
ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তৃতায় জুলাই বিপ্লবে শাহাদাত বরনকারী সকল শহিদদের স্মরণ করে বলেন, যাদের জীবন দানে আমরা মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদেরকে শ্রদ্ধার জায়গায় রাখতে হবে। তিনি নিরীহ মানুষের নামে অযথা মামলায় হয়রানি না করার আহবান জানিয়ে বলেন, দেশটা সকলের। এদেশের সকল নাগরিক,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার ভোগ করবে। কিছু দুষ্ট লোকের জন্য আমাদের সৌহার্দ্য-সম্প্রতি বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবেনা। ৫ আগষ্টের পর জামায়াত নেতাকর্মীরা টানা ১৫ দিন মন্দির-মঠ পাহারা দিয়ে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিয়েছে।
তিনি বলেন, একটি দল এদেশের সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যাবহার করে। আবার তাদের দ্বারাই সংখ্যালঘুরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। সংখ্যালঘুদের উপর এসকল নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধের জন্য আমি জাতিসংঘে চিঠি লিখেছিলাম নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করার জন্য। তৎকালীন সরকারকেও একই চিঠি লিখেছিলাম। সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করবে আওয়ামী লীগ আর দায় চাপাবে জামায়াতের ওপর। এজন্যই তারা তদন্ত করে নাই।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সুনামগঞ্জের প্রয়াত সাবেক তিন জেলা আমির আহমদ হোসাইন, আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সালেহ, হাতিমুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ দেশের ২৩ ভাগ খাদ্যশস্য উৎপাদন করে। এখানকার বালি পাথর মাছ দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। তবে সব দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে এই জনপদের মানুষ। দেশে ফ্যাসিবাদী শক্তি যেন আর ফিরে আসতে না পারে সেজন্য তিনি উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার সুনামগঞ্জবাসীর প্রতি আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের আরেক বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে হাজার হাজার মানুষকে গুম-খুন করা হয়েছে। জামায়াতকে রাজাকার জঙ্গিবাদের ট্যাগ লাগিয়ে রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় আমাদের নেতাদের ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আজ তারা নিজেরাই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বর্তমানেও একটি দল চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজিসহ নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে পুরনো কায়দায় জামায়াতের নামে ট্যাগ লাগাতে চায়।
সিলেট মহানগরী জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি কোনো চাঁদাবাজ দখলদারদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিবার জন্য নয়। তিনি নৈতিকতা সম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যদিয়ে সুনাগরিক গঠনের কথা বলেন।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় জেলা জামায়াতের আমির উপাধ্যক্ষ মাওলানা তোফায়েল আহমেদ খান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির শহিদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, অধ্যাপক গোলাম আযম, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ সকল শহিদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির উপাধ্যক্ষ মাওলানা তোফায়েল আহমেদ খান এর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান।
অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা কাজী মখলিছুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির এডভোকেট শামস উদ্দীন, সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মোমতাজুল হাসান আবেদ প্রমূখ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ থেকে মুজিবুল আলম প্রেরিত বার্তায় এসব কথা বলা হয়।